নয় মাস বয়সের শিশুর যত্ন এবং বিকাশ | Nine Month Baby’s Development In Bengali

Written by Madhurima Ghosh
Last Updated on

শিশু জন্মের পর থেকে আস্তে আস্তে বেড়ে ওঠার সময় প্রথম একটা বছর খুব গুরুত্বপূর্ণ সময়। এক্ষেত্রে প্রতি মাসে শিশু একটু একটু করে বেড়ে ওঠে এবং নতুন নতুন জিনিস শিখতে থাকে। যে কারণে এই সময় বাবা মাকে শিশুকে নিয়ে সচেতন থাকতে হয়। আপনার শিশুর যখন নয় মাস বয়স হবে তখন সে একটু একটু করে বড় হয়ে ওঠার পাশাপাশি বেশ কিছু নতুন জিনিস শিখবে। এমনকি তার শারীরিক ক্রিয়া-কলাপ, স্বাস্থ্য, খাবার পদ্ধতি প্রতিটি বিষয়েই খানিকটা পরিবর্তন আসবে। এক্ষেত্রে মা-বাবাকে এই বিষয়গুলি সম্পর্কে আগে থেকে সচেতন থাকতে হবে। যাতে নবজাতক শিশুটির কোনরকম সমস্যা না হয়। আসুন তাহলে আজকের নিবন্ধ থেকে জেনে নিন কিভাবে নয় মাসের শিশুকে যত্ন করবেন এবং তার বিকাশ কিভাবে হয়ে উঠবে এবং শিশুর যত্নের তালিকায় কি কি খাবার, ওষুধ থাকবে সবকিছু সম্পর্কে একটি বিস্তারিত আলোচনা।

নয় মাস বয়সী শিশুর ওজন এবং উচ্চতা কত হওয়া উচিত?

শিশু যখন নবম মাসে পা দেয় তখন তার বিকাশ প্রক্রিয়া আগের মাস গুলির তুলনায় অনেক বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। এই সময় শিশুটির ওজন এবং উচ্চতাতেও অনেক পরিবর্তন আসে। (১)

নয় মাস বয়সি একটি কন্যা সন্তানের স্বাভাবিক ওজন হয় ৭.২ কেজি থেকে ৯.৩ কেজি এবং উচ্চতা প্রায় ৭০ সেন্টিমিটার এর কাছাকাছি হয়। অন্যদিকে নয় মাস বয়সী একটি পুত্র সন্তানের স্বাভাবিক ওজন হয় ৭.৯ কেজি থেকে ১০.২ কেজি এবং উচ্চতা প্রায় ৭২ সেন্টিমিটার এর কাছাকাছি। যদিও প্রত্যেকটি শিশুর শারীরিক গঠন, শারীরিক বিকাশ প্রক্রিয়া আলাদা। তাই সবার ক্ষেত্রে যে এমনটাই হবে তা নয়। কারো কারো ক্ষেত্রে ওজন এবং উচ্চতায় পার্থক্য থাকতেই পারে।

তবে শিশুর বাবা-মায়েদের মনে রাখতে হবে জন্মের সময় শিশুর ওজন কতখানি থাকছে, তার ওপর পরবর্তী সময় শিশুর ওজন বৃদ্ধি নির্ভর করে। সাধারণত শিশুর জন্মের সময় যা ওজন থাকে তার পাঁচ মাস বয়সে ওজন জন্মের সময়ের ওজন এর দ্বিগুণ হয় এবং এক বছর বয়সে সেই ওজন তিনগুণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এক্ষেত্রে এভাবেই শিশুটির ওজন ধীরে ধীরে বেড়ে উঠবে। এই বিষয়টি সম্পর্কে শিশুর বাবা মায়েরা সচেতন থাকবেন কেননা শিশুর ওজন বৃদ্ধি তার জন্মের সময়ের ওজন এর উপরেই নির্ভর করবে।

নয় মাস বয়সী শিশুর বিকাশের মাইলফলক কি?

নয় মাস বয়সে শিশু আগের তুলনায় অনেক বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। বলা যায় এই সময় শিশুর দুষ্টুমি যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমনি কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর নিজের বুদ্ধি প্রকাশ পেতে দেখা দেয়। শিশু নতুন নতুন জিনিস শিখতে শুরু করে। এই সময় থেকেই শিশুর গতিবিধি পরিবর্তন হয়। নয় মাস বয়স থেকেই শিশুর মানসিক পরিবর্তন, শারীরিক বিকাশ, সামাজিক বিষয়গুলি সম্পর্কে নজর দেওয়া উচিত। কেননা এই সময় থেকেই শিশুর মধ্যে এই পরিবর্তনগুলি আসতে থাকে।

১) জ্ঞানীয় বিকাশ

অঙ্গভঙ্গির অনুকরণ : নয় মাস বয়স থেকে শিশু আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে, তখন তাদের মধ্যে নকল করার একটি প্রবণতা দেখা যায়। এক্ষেত্রে শিশুর পাশে যে লোকজন থাকে তারা কি করছে, কেমন করে কথা বলছে, কেমন করে নড়াচড়া করছে সেই বিষয়গুলির প্রতি শিশুর নজর পড়ে এবং শিশুটি সেগুলিকে নকল করার চেষ্টা করে। এই লক্ষণটি শিশুর নয় মাস বয়স থেকেই দেখা দিতে থাকে। সুতরাং এক্ষেত্রে শিশুর বাবা-মাকে খেয়াল রাখতে হবে শিশুর আশেপাশে যারা রয়েছে তারা যাতে যে কোন কাজ করার আগে তার সঠিক কিংবা বেঠিক ভেবে করেন এবং শিশুর সাথে চিন্তা ভাবনা করে কথা বলেন। কেননা আশেপাশের বড় লোকেদের যা করতে দেখবে বাচ্চা সেটাই শিখবে। এক্ষেত্রে তাই শিশুর নয় মাস বয়স থেকেই পরিবারের লোকজনদের সচেতন হয়ে শিশুর সাথে মেলামেশা করা উচিত। (২) (৩)

কণ্ঠস্বর তৈরি হওয়া : শিশু নয় মাস বয়স থেকেই বিভিন্ন শব্দ করতে পারে। বিভিন্ন শব্দের অনুকরণ করতে পারে, নিজস্ব মৌলিক শব্দ উচ্চারণ করার চেষ্টা করে। এমনকি মামা, বাবা, দাদা এই উচ্চারণগুলি শেখে। এক্ষেত্রে শিশুর সাথে যারা সব সময় রয়েছেন তারা যদি শিশুটির সাথে কথা বলার চেষ্টা করেন তাহলে খুব তাড়াতাড়ি শিশুটির বুলি ফুটবে। (৪)

কোন ব্যক্তি বা বস্তু দেখানো : নয় মাস বয়স থেকেই শিশুকে কোন জিনিস দেখালে কিংবা কোন মানুষের দিকে দেখিয়ে ইশারা করলে তারা তা বুঝতে পারে। এমনকি তারা নিজেরাও ইশারা করতে পারে। নয় মাস বয়স থেকেই শিশু নিজে কোন জিনিসটি চায় কিংবা কার কাছে যেতে চায় সেগুলি ইশারা করে বলতে পারে। (২)

খেলা পছন্দ করে : নয় মাস বয়স থেকেই শিশুর সাথে যদি কেউ খেলে তাহলে শিশুটি তা উপভোগ করতে পারে এবং সেটি পছন্দ করে। অনেক সময় উঁকি দেওয়া, কোনও খেলনা লুকিয়ে রেখে খেলা করা এ ধরনের খেলা গুলো শিশুর সাথে করা হলে তারা জিনিসটা উপভোগ করতে পারে। (২)

‘ন’ শব্দটি ভালো করে বুঝতে পারে : নয় মাস বয়স থেকেই শিশুরা ‘ন’ শব্দটি বুঝতে শুরু করে। কেউ যদি শিশুকে দেব না, যাব না এ ধরনের কোনো কথা বলে সে ক্ষেত্রে শিশুটি বুঝতে থাকে এটি না বোঝাচ্ছে। পরখ করে দেখবেন, শিশুকে বলবেন এটা পাবে না, এখানে যাব না, এটা দেব না তখন তারা চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করবে। (২)

মুখে জিনিস রাখা : শিশুর বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এই নয় মাস বয়স খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই সময় যেমন বাচ্চারা অনেক নতুন জিনিস শিখতে শুরু করে, তেমনি দুষ্টুমি বাড়তে থাকে এবং যেকোনো জিনিস মুখে দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। মূলত পঞ্চম মাসের পর থেকেই বাচ্চাদের হাতের কাছে যা পাবে তা মুখে দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। তাই এই সময়ে বাবা-মাকে যথেষ্ট সচেতন থাকতে হবে এবং শিশুর পাশে থাকা ছোটখাটো জিনিস গুলি সরিয়ে রাখতে হবে। (২)

ছোঁড়াছুঁড়ি করা : এই সময় বাচ্চারা মাটিতে যেকোনো জিনিস ফেলে দিতে, দেওয়ালে ছু্ঁড়ে মারতে শেখে। এক্ষেত্রে কেউ যদি খেলার ছলে বাচ্চাটি যে জিনিসটি ফেলে দিল সেটি তার দিকে আবার ফিরিয়ে দেয় এক্ষেত্রে শিশুরা খেলাটি উপভোগ করতে পারে। (৪)

২) শারীরিক বিকাশ

হামাগুড়ি দেওয়া : এই নয় মাস বয়স থেকেই শিশুদের মধ্যে হাঁটুতে ভর দিয়ে হামাগুড়ি দেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। তবে এই সময় যদি বাবা-মায়েরা একটু সতর্ক থেকে হামাগুড়ি দেওয়ার পরিবর্তে শিশুকে দাঁড় করিয়ে ধরে হাঁটানোর চেষ্টা করেন এক্ষেত্রে শিশু তাহলে খুব তাড়াতাড়ি হাঁটতে শিখে যাবে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই বয়স থেকে হামাগুড়ি দেওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়।

নিজে থেকে বসতে পারে : বাচ্চারা জন্মের পর থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত নিজে থেকে বসতে পারে না। কেননা সেই সময় শিশুদের শরীরের হাঁড় গুলি যথাযথভাবে বিকাশ হয় না এবং মেরুদন্ড দুর্বল থাকে। কিন্তু একটু একটু করে বড় হওয়ার সাথে সাথে তার শরীরের হাঁড়গুলি শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং মেরুদন্ড শক্ত হয়ে ওঠে। এক্ষেত্রে নয় মাস বয়স থেকেই শিশুরা কারো সাহায্য ছাড়া একা একা বসে থাকতে পারে।

ধরে রাখতে পারে : নয় মাস বয়স থেকেই শিশুরা ছোটখাট জিনিস তাদের হাতে ধরে রাখতে পারে। একহাত দিয়ে অন্য হাতে জিনিস নিতে পারে। মূলত এই সময় থেকেই শিশুদের মধ্যে জিনিস ধরে রাখার সম্ভাবনা দেখা দেয়।

সাহায্য নিয়ে দাঁড়ানো : নয় মাস বয়সে শিশু হামাগুড়ি দেওয়ার পাশাপাশি এই সময় থেকেই বিভিন্ন জিনিসের সহায়তায় শিশুরা আস্তে আস্তে দাঁড়াতে চেষ্টা করে। অনেক সময় ইশারা করে তারা কাছের মানুষকে নিজের কাছে ডাকে এবং তাকে দাঁড়াতে সাহায্য করার জন্য বোঝায়। এক্ষেত্রে যদি শিশুটিকে ধরে কেউ দাঁড় করায় সে আনন্দ পায়।

৩) সামাজিক ও মানসিক বিকাশ

আপন জনের নিকট : একদম ছোটবেলা থেকেই যারা শিশুর সাথে বেশি সময় কাটান বাচ্চারাও তাদের সাথে থাকতে খুব ভালোবাসে এবং তাদের সাথে ভালবাসা প্রকাশ করে। হঠাৎ করে অন্য লোকের সমাগম হলে বাচ্চারা নিজের চেনা মানুষটির কাছে থাকতে নিরাপদ বোধ করে।

অচেনা লোকদের ভয় : নয় মাস বয়স থেকেই শিশুর মধ্যে চেনা-অচেনা ভাবটি প্রকট হয়ে ওঠে। এই সময় থেকে শিশু চেনা মানুষ অচেনা মানুষ শনাক্ত করতে পারে। তাই তারা যদি কোনো নতুন মুখ দেখে কিংবা অপরিচিত কোন ব্যক্তি যদি তখন তাদের কোলে নেয় সেক্ষেত্রে শিশুরা কান্নাকাটি করতে থাকে এবং বিরক্ত করতে থাকে।

প্রিয় খেলনা : নয় মাস বয়স থেকেই শিশুরা ঠিকঠাকভাবে বিভিন্ন খেলনা নিয়ে খেলা করতে শেখে। যার ফলে তারা এই সময় থেকে বুঝতে শেখে কোন ধরনের খেলনা তাদের পছন্দ। সে ক্ষেত্রে অনেক খেলনার মধ্যে তাদের যেকোনো এক প্রকার খেলনা প্রিয় হয়ে ওঠে, যা দিয়ে তারা খেলতে পছন্দ করে।

ইশারার মাধ্যমে জিজ্ঞাসা : নয় মাস বয়স থেকেই শিশু যে কোন ইশারা বুঝতে পারে। তাই শিশুর বাবা মায়েরা যখন শিশুর সাথে কথা বলবেন সে ক্ষেত্রে ইশারায় কিংবা অঙ্গভঙ্গি দিয়ে তাদের জিজ্ঞাসা করুন। দেখবেন শিশুটিও তার অঙ্গভঙ্গি দিয়েই তার পছন্দ এবং অপছন্দ আপনাকে জানিয়ে দেবে।

নাম স্বীকৃতি : নয় মাস বয়স থেকেই শিশুরা নাম ধরে মানুষকে চিনতে শুরু করে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় শিশুটির মা কে? কিংবা বাবা কে? এইগুলি যদি তাকে জিজ্ঞেস করা হয় সে ইশারায় উত্তর দেয়। কিংবা শিশুটির সাথে পরিবারের কোনও সদস্য যদি সারাদিন সময় কাটায় সে ক্ষেত্রে তার নামও শিশুটি জেনে যায়। পরবর্তী সময়ে তার নাম ধরে ডাকলে ইশারায় শিশুটি তাকে দেখিয়ে দেয়।

কথা বলা শুরু করে : অনেক সময় দেখা যায় বেশ কিছু বাচ্চারা খুব তাড়াতাড়ি কথা বলতে শেখে। আবার অনেকের ক্ষেত্রে শিশুরা খুব দেরি করে কথা বলতে শেখে। তবে নয় মাস বয়স থেকেই শিশুরা বাবা, মা, দাদা এ ধরনের সাধারণ কয়েকটি শব্দ করতে পারে। এক্ষেত্রে আপনি যদি শিশুটির সাথে সারাদিন কথা বলতে থাকেন তাহলে শিশুটি খুব তাড়াতাড়ি কথা বলতে শিখে যাবে।

নয় মাস বয়সী শিশুকে কি কি ভ্যাকসিন দেওয়া উচিত?

শিশুর জন্মের পর থেকে টিকাকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।    এই টিকাকরণ মূলত শিশুর বিকাশের পাশাপাশি যেকোনো ধরনের গুরুতর এবং মারাত্মক রোগের প্রতিরোধ করে থাকে।   যে কারণে শিশুর জন্মের পর থেকেই এটি গুরুত্বপূর্ণ। ভারতে প্রতিবছর তিন কোটি গর্ভবতী মহিলাদের এবং ২.৬৭ কোটি নবজাতকের টিকা করন করা হয়। মূলত ভারত সরকারের দ্বারা ১২ ধরনের টিকা বিনামূল্যে দেওয়া হয়। এগুলো ডিপথেরিয়া, হুপিংকাশি, ধনুষ্টংকার, পোলিও এবং হাম এই সব রোগের জন্য দেওয়া হয়ে থাকে। মারাত্মক রোগ গুলির বিরুদ্ধে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলার জন্য টিকাকরণ করানো হয়।

ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে এ সমস্ত ওষুধগুলি শিশুদের শরীরে দেওয়া হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে পোলিও ওষুধ হিসেবে বাচ্চাদের এই ভ্যাকসিন গুলো দেওয়া হয়। ভ্যাকসিন গুলো যেকোন সংক্রমনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে। সঠিক সময় শিশুদের যদি ভ্যাকসিন দেওয়া হয়ে থাকে তাহলে সংক্রমণজনিত কোন রোগ শিশুদের শরীরে হয়না। এই ভ্যাকসিন গুলির দ্বারা শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে থাকে।

শিশুদের শরীরে ভ্যাকসিন দেওয়ার ফলে টি লিম্ফোসাইট এবং লিম্ফোসাইটস তৈরি হয়। আগে যদি শিশুরা কোন রোগ সংক্রমণের শিকার হয় সে ক্ষেত্রে টিকাকরণের পরে তা থেকে মুক্তি পেতে পারে।

সেজন্য জন্মের পর শিশুদের যথাযথ সময়ে টিকাকরণ করানো হলো পিতা-মাতার সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির কারণে বাচ্চাদেরকে টিকাকরণ করানোর ফলে আগের থেকে মারাত্মক রোগ থেকে রক্ষা করা যেতে পারে। আজ ভারত পোলিও ভাইরাস থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। ১৯৯০ সাল নাগাদ ভারতে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ১০০০ টি শিশু পোলিও রোগের শিকার হতো। কিন্তু ২০১৪ সালের পরে এই রোগের আর কিছু পাওয়া যায়নি। চিকিৎসকের পরামর্শেই শিশুদের প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন দেওয়া উচিত। টিকা দেওয়ার কারনে যেখানে ইনজেকশন দেওয়া হচ্ছে সেই জায়গাটিতে লালচে ভাব দেখা দিতে পারে এবং সামান্য ব্যথা হতে পারে। এক্ষেত্রে শিশুটিকে টিকা দেওয়ার পরে যথাযথভাবে ব্যথা কমানোর ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

টিকাকরণ এর ফলে বেশ কিছু মারাত্মক রোগ সম্পূর্ণরূপে নির্মূল হয়ে যায়। কয়েক বছর আগে পর্যন্ত যে রোগ গুলি মানুষকে শেষ করে দিয়েছিল টিকাদান সারা বিশ্ব থেকে সেই সমস্ত রোগ গুলোকে সরিয়ে দিয়েছে। শিশুদের সঠিক সময়ে টিকা দেওয়ার ফলে পরিবারের সময় এবং অর্থ দুইই সাশ্রয় হয়। সঠিক সময়ে শিশুকে টিকা না দিলে শিশুটি অসুস্থ হয়ে যেতে পারে এর পাশাপাশি প্রচুর আর্থিক এবং শারীরিক ক্ষতিও হতে পারে। নবজাতক থেকে শিশুদের টিকা করনের প্রক্রিয়াটি ইন্ডিয়ান একাডেমি অফ পেডিয়াট্রাইক্স সুপারিশে তৈরি করা হয়। ভারতের একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা রয়েছে। এই ভ্যাকসিন গুলি শুধু বিনামূল্যেই দেওয়া হয় না, এর পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবকরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে কিংবা সরকারি হাসপাতাল থেকে এগুলি দেওয়া যেতে পারে। শিশুর ভ্যাকসিনের মধ্যে ৫ ধরনের ভ্যাকসিন রয়েছে। এটেনিউটেড ভ্যাকসিন, নিষ্ক্রিয় ভ্যাকসিন, টক্সয়েড ভ্যাকসিন, সাবু নিট ভ্যাকসিন এবং কনজুগেট ভ্যাকসিন। এই পাঁচ ধরনের ভ্যাকসিন এর মাধ্যমে শিশুদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলা হয়।

তবে ভ্যাকসিন দেওয়ার ফলে শিশুদের যে ব্যথা হয় সেখানে বরফ লাগিয়ে দিতে পারেন। অনেক সময় ভ্যাকসিন দেওয়ার ফলে শিশুদের জ্বর আসতে পারে সে ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও ভ্যাকসিন নেওয়ার পরবর্তী সময়ে শিশুদের প্রচুর পরিমাণে তরল পান করান এবং ভ্যাকসিন নেওয়ার কিছুদিন পরে অবধি সন্তানের ওপর নজর রাখুন তার মধ্যে যদি উদ্বেগজনক কিছু দেখেন তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। তবে টিকা গুলি কখনো দেওয়া বন্ধ করবেন না। কেননা ভ্যাকসিন গুলির নিরাপদ এবং কার্যকর প্রভাব রয়েছে যা শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য দায়ী এবং মারাত্মক রোগ থেকে মুক্ত রাখতে সহায়তা করে।

জন্মের পর থেকেই শিশুকে যথাযথ সময়ে ভ্যাকসিন গুলি দেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। নয় মাস বয়সে শিশুর যথাযথ বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য ভ্যাকসিন গুলির গুরুত্ব মারাত্মক। এই ভ্যাকসিন গুলো কেবলমাত্র শিশুর বিকাশে সহায়ক নয় বরং এর পাশাপাশি শিশুর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে এবং বিভিন্ন রোগ থেকে দূরে রাখতে সহায়তা করে। (৫)

মূলত নয় মাস বয়সে শিশুকে দুটি ভ্যাকসিন দেওয়া হয়ে থাকে।

ওপিভি টু,

এম এম আর ওয়ান।

মূলত নয় মাস থেকে বারো মাসের মধ্যে শিশুকে টাইফয়েড ভ্যাকসিন দিয়ে দেওয়া হয়ে থাকে। এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য পেতে অবশ্যই আপনি আপনার চিকিৎসক কিংবা শিশু বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করুন। শিশুর বয়স নয় মাস থেকে পাঁচ বছর বয়স অবধি প্রতি ছয় মাস অন্তর ভিটামিন-এ পরিপূরক টিকা দান করা হয়ে থাকে।

নয় মাস বয়সী শিশুর কত পরিমান দুধের প্রয়োজন?

মায়ের দুধ  – জন্মের পর থেকে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে কেবলমাত্র মায়ের দুধ খাওয়ানো উচিত। ছয় মাস পর থেকে শিশু কে শক্ত খাবার দেওয়া যেতে পারে। তবে শিশু বাইরের খাবার খাওয়ার পাশাপাশি ও বুকের দুধ পান করতে পারে। এ ক্ষেত্রে নয় মাস বয়সী শিশুকে দিনে তিন থেকে পাঁচ বার বুকের দুধ খাওয়ানো যেতে পারে। যদি পরিমাণ জানতে চান সে ক্ষেত্রে শিশুরা ৮৮৭ থেকে ৯৪৬ মিলিলিটার বা ৩০ থেকে ৩২ আউন্স বুকের দুধ খেতে পারে। দুধের পরিমাণ স্বাস্থ্যের অবস্থা এবং শিশুদের খিদের ওপর নির্ভর করে। (৬)

ফর্মুলা দুধ : অনেক সময় দেখা যায় মায়েদের পরিমাণমতো বুকের দুধ তৈরি হয় না সে ক্ষেত্রে শিশুর খিদে মেটানোর জন্য তাকে ফর্মুলা দুধ দেওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে দিনে চার থেকে পাঁচবার শিশুকে ফর্মুলা দুধ দেওয়া যেতে পারে। দিনে ৭০০ থেকে ৯৫০ মিলিগ্রাম ফর্মুলা দুধ শিশুকে খাওয়ানো যায়। যদিও এই দুধের পরিমাণ সম্পূর্ণ নির্ভর করে শিশুর খিদে এবং স্বাস্থ্য অবস্থার উপরে। তাই শিশুর খিদে এবং তার চাহিদা অনুযায়ী তাকে যথাযথ পরিমাণে দুধ পান করাতে হবে।

নয় মাস বয়সী শিশুর কত পরিমান খাবার প্রয়োজন?

শিশু জন্মের পর থেকে আস্তে আস্তে যখন বেড়ে ওঠে প্রত্যেক মাসেই ধীরে ধীরে তার খাবারের চাহিদা বাড়তে থাকে। এই সময় শিশুর বিকাশের জন্য পরিমাণমতো খাওয়ার দেওয়াটা খুব জরুরী। এ জন্য নির্দিষ্ট খাদ্য তালিকা মেনে শিশুকে খাওয়ানো উচিত। মূলত ছয় মাসের পর থেকেই শিশুকে শক্ত খাবার ধীরে ধীরে দেওয়া যেতে থাকে। নবম মাস থেকে পুষ্টিকর খাবারের প্রতি জোর দেওয়া হয়। জেনে নিন নয় মাস বয়সী শিশুকে কি কি খাবার কত পরিমাণে দেবেন?

সিরিয়াল জাতীয় খাদ্য – সারাদিনে চার থেকে আট চা চামচ বা তার বেশি দিতে পারেন।

সবুজ শাকসবজি – এক-চতুর্থাংশ কাপ থেকে আধা কাপ পর্যন্ত দিনে দুই থেকে তিনবার দিতে পারেন।

ফল – এক-চতুর্থাংশ কাপ থেকে আধা কাপ পর্যন্ত দিনে দুই থেকে তিনবার দিতে পারেন।

দুগ্ধজাত দ্রব্য যেমন দই বা পনির – এক-চতুর্থাংশ কাপ দই বা ছোট ছোট টুকরো করা পনির এক থেকে দুই বার দিনে দিতে পারেন।

প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার যেমন ডিমের কুসুম, মুরগির মাংস, মটরশুটি – এক থেকে দুই বার এক-চতুর্থাংশ কাপ দিতে পারেন।

জল – প্রায় ১২৫ থেকে ২৫০ মিলিলিটার বা আধা কাপ থেকে এক কাপ সারাদিনে দিতে পারেন।

ফলের রস – শিশুর বয়স এক বছর হওয়ার পর থেকে ফলের রস দেবেন।

এক বছর হয়ে যাওয়ার পর থেকে শিশুকে পুরো দুধ এবং ডিমের সাদা অংশ দেওয়া শুরু করবেন। এছাড়াও শিশুর স্বাস্থ্য কিংবা প্রয়োজনীয়তা যদি আলাদা হয় সেক্ষেত্রে শিশুর খাদ্য তালিকা তৈরীর সময় শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে তা তৈরি করবেন।

নয় মাস বয়সী শিশুর কত ঘুম দরকার?

শিশুর দৈনিক ঘুমের চাহিদা যদি যথাযথভাবে সম্পূর্ণ হয় সেক্ষেত্রে বিকাশ তাড়াতাড়ি ঘটবে। তাই জন্মের পর থেকেই শিশুর বিকাশ যথাযথভাবে হওয়ার জন্য ঘুমের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। জন্মের পর থেকে যেখানে শিশু বেশিরভাগ সময়ই ঘুমিয়ে থাকতো সেখানে নয় মাস বয়স থেকে শিশুর ঘুমের চাহিদা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১২ থেকে ১৬ ঘন্টা হতে হবে। তবে এর থেকে কিছু কম-বেশিও হতে পারে। কিন্তু এই দৈনিক চাহিদাটা যেন পূরণ হয় সেই বিষয়ে শিশুর মা বাবাকে খেয়াল রাখতে হবে। (৭)

নয় মাস বয়সী শিশুর জন্য খেলাধুলা এবং ক্রিয়া-কলাপ

আপনার শিশুটি যথাযথভাবে সুস্থ রয়েছে কিনা এবং সক্রিয় রয়েছে কিনা তা নির্ভর করবে তার খেলাধুলার উপর। নয় মাস বয়সী শিশুর বিভিন্ন খেলাধুলা এবং ক্রিয়া-কলাপ গুলি সম্পর্কে জেনে নিন যেগুলি দেখে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার শিশুটি সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছে। (৮)

বল খেলা : এমনিতেই বাচ্চারা বল নিয়ে খেলতে ভালবাসে। যদি তাদের সামনে কোন ছোট বা বড় বল দেওয়া হয় তারা সেটি ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করে, আবার কেউ যদি ফেলে দেওয়া বলটি নিয়ে আসে বাচ্চারা মজা করে সেটি বারবার ফেলে দেয় এবং এই প্রক্রিয়াটি পুনরাবৃত্তি হয়। এক্ষেত্রে বাচ্চারা হালকা যেকোনো জিনিস দিয়ে খেলতে পছন্দ করে।

বই এবং ছবি দেখা : নয় মাস থেকেই শিশুদের দৃষ্টি শক্তি তৈরি হয়ে যায়। সেজন্য বাচ্চাকে রঙিন বই দেখান, রঙিন ছবি দেখান, গল্প বলুন। এর ফলে বইয়ের পৃষ্ঠা গুলি দেখে তার আনন্দ পাবে।

বালতি বাজানো : নয় মাস বয়স থেকেই দেখা যায় শিশু স্নানের সময় খেলা করতে পছন্দ করে। এক্ষেত্রে তার সামনে যদি একটি বালতি থাকে সেটিকে খেলনা ভেবে সে খেলতে থাকে। আপনি যদি বালতি বাজিয়ে একবার তাকে দেখিয়ে দেন, সঙ্গে সঙ্গে সেও বালতি বাজানোর চেষ্টা করবে এবং খেলতে থাকবে এবং হাত চালানোর পাশাপাশি মুখে কোনো শব্দ করার চেষ্টা করবে। এইভাবে শিশুটি ধীরে ধীরে কিছু শব্দ শিখবে। পরবর্তী সময়ে শিশুর সামনে একটি বালতি দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকুন এবং তার প্রতিক্রিয়াটি লক্ষ্য করুন।

গান করা বা হাততালি দেওয়া : শিশুর সামনে হাততালি দিয়ে গান করুন দেখবেন শিশুটি গান শুনে হাততালি দিয়ে কিংবা পায়ে তালি দিয়ে নাচ করার চেষ্টা করছে। এইভাবে শিশুটি আনন্দ পাবে এবং তার শ্রবণ ক্ষমতা ও তৈরি হবে।

নয় মাস বয়সী শিশুদের পিতা-মাতার সাধারণ স্বাস্থ্য উদ্বেগ

হুপিং কাশি : এই ধরনের কাশি সংক্রামক হয়। এটি যেকোন বয়সের মানুষের হতে পারে। যদি আপনার সন্তানের নাক দিয়ে সবসময় জল পড়তে থাকে, হালকা জ্বর হয় এবং ক্রমাগত কাশি হতে থাকে তবে দেরি না করে তাকে শিশু চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। কেননা এটিতে পরবর্তী সময় শিশুর শ্বাস নিতে অসুবিধা হতে পারে।

নিউমোনিয়া : বাচ্চার যদি অনবরত জ্বর, সর্দি, বমি এবং শ্বাসকষ্টের মতন সমস্যাগুলো দেখা যায় তাহলে তা নিউমোনিয়ার লক্ষণ হতে পারে। এমন লক্ষণ দেখলে সত্বর চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন এবং শিশুর স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিন।

কানের সংক্রমণ  : শিশুরা ছোট হওয়ায় বলতে না পারায় তাদের সমস্যাগুলি আমাদেরকে বুঝে নিতে হয়। অনেক সময় দেখা যায় স্নানের সময় শিশুর কানে হালকা জল চলে যেতে পারে, সেক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে কানে ব্যথা হতে পারে। অনেক সময় স্নানের পর বাবা-মা ভালো করে কান পরিষ্কার করে দিলেও কখনো কখনো জল থেকে যায়, যার ফলে কানে সংক্রমনের সৃষ্টি হয় এবং ব্যথার সমস্যায় ভুগতে হয় শিশুটিকে। কানের সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই আপনার বাচ্চাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান এবং প্রয়োজনীয় সাবধানতা অবলম্বন করুন।

শিশুর শ্রবণশক্তি, দৃষ্টি এবং অন্যান্য সংবেদন গুলি

আমার বাচ্চা কি দেখতে পারে?

জন্মের পর থেকে মাসে মাসে একটি শিশু যেমন বৃদ্ধি পেতে শুরু করে এবং সে সক্রিয় হয়ে ওঠে। তেমনি জন্মের পর থেকে মাসে মাসে শিশুর দৃষ্টিশক্তিও বাড়তে থাকে এবং নয় মাস বয়সে এসে শিশুর দৃষ্টিশক্তি অনেকটাই বেড়ে যায়। তখন শিশু কাছের এবং দূরের জিনিস ভালো মতই দেখতে পারে। এর পাশাপাশি চলমান জিনিসগুলিও তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। যে কারণে রঙিন বই, খেলনা, পরিচিত মুখ এদের সকলকে দেখলে শিশু চিনতে পারে। (৯)

আমার বাচ্চা কি শুনতে পারে?

জন্মের পর থেকেই শিশু আপনাকে শুনতে এবং বুঝতে শুরু করে। বড় হবার সাথে সাথে শিশুটির বোঝার এবং শোনার ক্ষমতা ও বিকশিত হয়। নয় মাস বয়সে এসে শিশুটি বেশি শব্দ শুনতে পারে এবং শুনে শুনে দাদা বাবা এই শব্দগুলো বলারও চেষ্টা করে।

আমার শিশু কি স্বাদ এবং গন্ধ বুঝতে পারে?

নয় মাস বয়স থেকে শিশুরা ধীরে ধীরে তাদের পছন্দের খাবার বেছে নেয়। আবার যেটা খেতে ভালো লাগেনা সেটা খেতে অস্বীকার করে। তাই আপনার শিশু যদি কোনও খাবার খেতে অস্বীকার করে তাহলে সেটা অল্প পরিমাণে দেওয়ার চেষ্টা করুন। এতে সে অল্প অল্প করে জিনিষটির স্বাদ গ্রহণ করবে। এর পাশাপাশি শিশুর গন্ধ নেওয়ার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সেক্ষেত্রে তাকে ভালো সুগন্ধি ক্রিম বা পাউডার মাখাতে পারেন যাতে সে গন্ধ বুঝতে পারে।

শিশুর স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কিত কিছু তথ্য

বাচ্চাকে স্নান করান – আপনার বাচ্চাকে প্রতিদিন অবশ্যই স্নান করাবেন। যদি আবহাওয়ার কারণে কখনো স্নান না করাতে পারেন সে ক্ষেত্রে নরম কাপড় ভিজিয়ে নিয়ে তার শরীরটা হালকাভাবে মুছে দিন এবং তারপরে ময়েশ্চারাইজার বা বেবি ক্রিম লাগিয়ে দিন। এতে শিশুটির শরীর ঠান্ডা থাকবে এবং কোন অস্বস্তিভাব থাকবে না।

হাত ধোয়া – বাইরে থেকে ঘুরে আসার পর ঘরে ঢুকেই বাচ্চাকে ধরার আগে হাত ধোয়ার অভ্যাস করুন। শিশুরা দুর্বল প্রকৃতির হয়, তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে না। তাই যে কোনো সংক্রমণ তাদের দ্রুত হয়। তাই বাইরে থেকে কেউ আসার পরে শিশুটিকে স্পর্শ করার আগে অবশ্যই তার হাত ধুয়ে নিতে বলুন।

ঘরের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা – নয় মাস বয়সী বাচ্চা মাটিতে হামাগুড়ি দিয়ে, মাটিতে বসে খেলাধুলা করবে। সেই বিষয়টিকে মাথায় রেখে প্রত্যেকদিন জীবাণুনাশক তরল দিয়ে ঘর পরিষ্কার রাখুন। কেননা নয় মাস বয়সী শিশুদের মধ্যে যেকোনো পড়ে থাকা জিনিস নিয়ে মুখে দেওয়ার অভ্যাস থাকে, তাই কোনো নোংরা জিনিস যদি তার মুখে যায় তার স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে। তাই বাড়ির সর্বত্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করুন।

খেলনা পরিষ্কার রাখুন – ছোট বাচ্চারা খেলনা দিয়ে খেলতে খেলতে হঠাৎ করে তা মুখে দিয়ে ফেলে। খেলনাটি যদি অপরিষ্কার থাকে তাতে শিশুদের পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই প্রতিদিন শিশুর খেলনা গুলো ভালো করে ধুয়ে মুছে রাখুন।

শিশুর পোশাক – শিশুর জামা কাপড় প্রত্যেকদিন অ্যান্টিসেপটিক তরল এবং হালকা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। যাতে জামার মাধ্যমে কোন রকম জীবাণু সংক্রমণ না হয়।

পাত্র ধুয়ে নেওয়া – একটি নয় মাস বয়সী শিশু শক্ত খাবার খেতে পারে। এই পরিস্থিতিতে আপনার শিশুটিকে যে বাটি এবং চামচ দিয়ে খাওয়াচ্ছেন সেটি ব্যবহার করার আগে ভালো করে ধুয়ে নিন।

দাঁত পরিষ্কার করুন – শিশুর মুখ পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে দাঁতের যত্ন নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। ছোট্ট শিশুর দাঁত পরিষ্কারের জন্য শিশুদের ব্রাশ কিংবা আঙুলের উপর একটি নরম কাপড় পেচিয়ে নিয়ে শিশুটির দাঁত পরিষ্কার করা উচিত।

বাবা-মা কিভাবে শিশুর বিকাশে সহায়তা করতে পারে?

সন্তানের বিকাশের ক্ষেত্রে পিতা-মাতার গুরুত্ব সর্বোচ্চ রয়েছে। কেননা পিতা-মাতার ভূমিকা ছাড়া কোন সন্তান বেড়ে উঠতে পারে না। পিতা মাতা সন্তানকে আগলে রাখেন এবং তাকে বেড়ে তোলার জন্য একটি সুন্দর পরিবেশ গড়ে তোলেন। তাহলে জেনে নিন কি কি বিষয়ে বাবা মা সন্তানের বিকাশে সহায়তা করতে পারে।

১) রঙিন বই, ছবি শিশুদের দেখান এবং শিশুদের সুন্দর সুন্দর গল্প বলুন।

২) পুষ্টিকর খাবার খাওয়ান।

৩) বাবা-মায়েরা শিশুদের সাথে খেলুন এবং যথাসম্ভব তাদের সাথে সময় কাটান।

৪) নতুন জিনিস দেখান, নতুন খেলা শেখান।

৫) বাচ্চাদের সাথে খেলুন এবং মাটিতে হামাগুড়ি দেওয়ার সময় সাহায্য করুন।

৬)  নয় মাস বয়সী শিশুরা মাটিতে বসে খেলা করতে পছন্দ করে। তাই বাচ্চা যখন মাটিতে বসে খেলবে তখন বাচ্চার পাশেই থাকুন, যাতে তার শরীরে কোনো আঘাত না লাগে কিংবা কোনো সমস্যা না হয়।

৭) বাড়ির ধারালো আসবাবপত্রগুলো থেকে বাচ্চাকে দূরে রাখুন যাতে শিশুটি কোন আঘাত না পায় এবং ছোটখাট জিনিস বাচ্চার হাতের কাজ থেকে দূরে সরিয়ে রাখুন। কেননা এই বয়সী শিশুদের যেকোনো জিনিস মুখে দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

নতুন বাবা মায়েরা শিশুদের ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো মাথায় রাখুন দেখবেন তাহলে আপনার শিশু সুস্থ-সুন্দর ভাবে বেড়ে উঠবে।

নয় মাস বয়সী শিশুর বিকাশের ক্ষেত্রে বাবা-মাকে কখন চিন্তিত হওয়া উচিত?

১) আপনার বাচ্চা যদি সঠিকভাবে দাঁড়াতে না পারে।

২) শিশুটি যদি আঙ্গুল দিয়ে কিংবা হাত দিয়ে কোন কিছু ধরে রাখতে না পারে।

৩) শিশুর যদি দূরের জিনিস দেখতে কিংবা বুঝতে অসুবিধা হয়।

৪)  বাচ্চা যদি বারবার তার চোখটাকে কচলাতে থাকে, সেক্ষেত্রে আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে।

৫) বাচ্চা যদি আওয়াজ শুনে সাড়া না দেয়।

৬) বাচ্চার যদি বসতে সমস্যা হয়।

৭) আপনার শিশুটি যদি সারা দিন জ্বালাতন করে এবং কান্নাকাটি করে সেক্ষেত্রে আপনাকে বিষয়গুলিকে ভালোভাবে দেখতে হবে।

নয় মাস বয়সী শিশুর জন্য চেকলিস্ট

শিশুর জন্মের পর থেকে প্রত্যেক মাসের জন্যই বাবা-মায়েদের একটি নির্দিষ্ট চেকলিস্ট তৈরি করে রাখা উচিত। তেমনি দেখে নিন নয় মাস বয়সী শিশুর জন্য কিভাবে চেক লিস্ট তৈরি করবেন। যাতে শিশুর বিকাশ তাড়াতাড়ি হয়।

১) শিশুকে নিয়মিত ডাক্তারের মাধ্যমে চেকআপ করান।

২)  শিশুর নয় মাসের ভ্যাকসিনের তথ্য লিখে রাখুন।

৩) শিশুর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দিন।

৪) নয় মাস বয়সী শিশুর ছবি তুলতে ভুলবেন না এতে আপনি আপনার শিশুর শারীরিক বিকাশ সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারনা পাবেন।

শিশু জন্মের পর থেকে তার প্রথম বছর বয়স অবধি সময়টা খুব সুন্দর। এই সময়টা বাবা-মায়ের চোখের সামনে দিয়ে নানা অভিব্যক্তির মাধ্যমে শিশু ধীরে ধীরে বড় হয়ে যায়। এই সময়টা যেমন বাবা মায়ের কাছেও খুব আনন্দের, তেমনি শিশুটির কাছেও খুব গুরুত্বপূর্ণ সময়। তাই আপনার সন্তানটিকে খুব সুন্দর ভাবে বড় করে তুলুন। নয় মাস বয়সে ছোট্ট শিশুটি যেমন নতুন নতুন অনেক জিনিস শিখবে, তেমনই তার দুষ্টুমিটা ও বাড়বে। তাই অবশ্যই শিশুর বিকাশের পাশাপাশি তার স্বাস্থ্য এবং তার সারাক্ষণ এর প্রত্যেকটা কাজ কর্মের প্রতি নজর রাখতে ভুলবেন না।

সচরাচর জিজ্ঞাস্য :

১) বাচ্চারা কি নয় মাস বয়সে হাঁটা শুরু করতে পারে?

উত্তরঃ নয় মাস বয়সে বাচ্চারা হামাগুড়ি শেখে। যদি হাঁটার কথা বলি সে ক্ষেত্রে বাচ্চা কিছু ধরে হাঁটতে পারে। তবে একা হাঁটতে পারে না। তবে এটি সম্পূর্ণ নির্ভর করে শিশুর স্বাস্থ্য এবং তার বিকাশের ওপর। (১০)

২) আমার নয় মাস বয়সী শিশুটি বসতে শেখে নি, আমার কি এই সম্পর্কে চিন্তা করা উচিত?

উত্তরঃ বাচ্চারা সাধারণত ছয় মাস বয়স থেকেই কোন কিছুর সাহায্য ছাড়া বসতে শুরু করে। তবে এক্ষেত্রে আপনার বাচ্চা যদি নয় মাস বয়সি হয় এবং এখনও বসা শুরু না করে এটি নিয়ে আপনার চিন্তা করা উচিত এবং শিশুকে ভালো করে চেকআপ করিয়ে ডাক্তারের সাথে কথা বলা উচিত। (১১)

একটি শিশুর সুস্থ ভাবে বেড়ে ওঠা তার বাবা-মায়ের কাছে দুর্মূল্য উপহারের সমান হয়। একটি সুস্থ সুন্দর শিশু তার বাবা-মায়ের কাছে পৃথিবীর সব আনন্দের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। আজকের নিবন্ধ থেকে নতুন বাবা-মায়েরা নিজের শিশুকে সুস্থ সুন্দর রাখার অনেক তথ্য পেয়েছেন। আশাকরি এগুলি আপনাদের কাজে লাগবে। এবার তাহলে নয় মাস বয়সে আপনার শিশুর মধ্যে আর কি কি পরিবর্তন দেখলেন সেগুলি আমাদের জানাতে ভুলবেন না এবং আপনাদের ছোট্ট সোনা কে সুস্থ এবং ভাল রাখবেন।

Reference

1. Infant growth chart By CDC
2. What most babies do by this age: By CDC
3. Developmental milestones record – 9 months By MEDLINEPLUS
4. Your Child’s Development: 9 Months By KidsHealth
5. vaccine By ACVIP
6. Feeding Guide for the First Year By URMC
7. Healthy Sleep Habits: How Many Hours Does Your Child Need? By HealthyChildren
8. Child development 9–12 months By healthywa
9. Your Baby’s Hearing, Vision, and Other Senses: 9 Months By Kidshealth
10. Child development (4) – nine to 12 months By better health
11. The development of motor behavior By NCBI
Was this article helpful?
thumbsupthumbsdown

Community Experiences

Join the conversation and become a part of our vibrant community! Share your stories, experiences, and insights to connect with like-minded individuals.

Latest Articles