হলুদের উপকারিতা: 15 Essential Benefits For Health And Beauty
প্রাকৃতিক শক্তিতে ভরপুর, দেহ ও মনের যত্নের জন্য আদর্শ সোনালী মশলা সীমাহীন।

Image: Shutterstock
রান্নাঘরে হোক কিংবা ত্বক পরিচর্যায়, আমাদের অন্যতম একটি পরিচিত উপাদান হলো হলুদ। ছোট থেকেই আমরা জেনে আসছি বিভিন্নরকম ভাবে হলুদের গুনাগুন সম্পর্কে। শরীরের সমস্যা, ত্বকের সমস্যা, পেটের সমস্যা সবেতেই সমান ভাবে কাজ করে চলেছে হলুদ। এছাড়াও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কিংবা শুভ ক্ষেত্রে হলুদের ব্যবহার আমরা সকলেই জানি। যেমন ধরো, সরস্বতী পুজো মানেই সকালবেলা কাঁচা হলুদ বেটে তা মেখে চান করে গিয়ে মা সরস্বতীর সামনে অঞ্জলি দেওয়া কিংবা ত্বকের জেল্লা বাড়াতে মা-ঠাকুমারা আমাদের এককথায় উপদেশ দিয়ে দেন হলুদ মাখতে। ত্বক পরিচর্যার ক্ষেত্রে হলুদের সাহায্যে আমরা নানা রকম প্যাক ব্যবহার করে থাকি। এছাড়া বর্তমানে অনেক বিউটি প্রোডাক্টেও হলুদের ব্যবহার হয়ে আসছে। সুতরাং হলুদের গুরুত্ব আমরা সকলেই জানি। প্রায়শই রবিবার ছুটির দিন একটা জমজমাট মাংস রান্না করতে হবে, সেখানেও কিন্তু সঙ্গী হলুদ। তবে এবার আমরা হলুদের সম্পর্কে এমন কিছু জানবো যেগুলো আমরা হয়তো জানিনা কিংবা জানলেও সেসব ক্ষেত্রে হলুদের ভূমিকা কি হতে পারে সেটা জানিনা। উন্নত আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে শুরু থেকেই বিভিন্ন ত্বক পরিচর্যাকারী ঔষধি তৈরি করতে কিংবা কোন স্বাস্থ্যের প্রয়োজনীয় উপাদান তৈরি করতে হলুদের ব্যবহার হয়ে আসছে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে হলুদে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ভাইরাল এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান সমূহ রয়েছে। তার সাথে হলুদের গুনাগুন মাত্রাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে এর মধ্যে উপস্থিত অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টি-আর্সিনোজেনিক উপাদানসমূহ। এগুলি শরীরকে ভেতর থেকে রোগ মুক্ত করে স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়তা করে। আমাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো আমরা সকাল বেলা খালি পেটে হলুদ দিয়ে আঁখি গুড় দিয়ে কিংবা হলুদ দিয়ে মধু দিয়ে খেয়ে থাকি। আসুন তাহলে এবার জেনে নিন হলুদ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষায় এবং রূপচর্চায় কি কিভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে? (১)

In This Article
হলুদ কী? – What is Turmeric in Bengali
হলুদকে ভারতীয় জাফরান বা সোনার মশলাও বলা হয়। এটি গ্রহের অন্যতম স্বাস্থ্যকর উপাদান এবং এটি প্রমাণ করার জন্য এক টন গবেষণা রয়েছে।
এর সর্বাধিক শক্তিশালী উপাদান হল কারকুমিন যা আপনার স্বাস্থ্যের প্রায় প্রতিটি কার্যকলাপকে বাড়িয়ে তোলে, তা জয়েন্টের ব্যথা হ্রাস করেই হোক বা ডায়াবেটিস এবং আলঝাইমার চিকিৎসাই হোক না কেন। হলুদকে রোগ নিরাময় কারী হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে।
হলুদ আপনার শরীরের জন্য কেন উপকারী? How Does Turmeric Work in Bengali?
গাছের শিকড় থেকে প্রাপ্ত এক ধরনের মসলা জাতীয় উপাদান হলো হলুদ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মূলতঃ ভারত ও বাংলাদেশ রন্ধন প্রক্রিয়ার একটি উল্লেখযোগ্য উপাদান হলো হলুদ। এছাড়াও চিকিৎসা ক্ষেত্রেও এর ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। হলুদের বৈজ্ঞানিক নাম কারকুমা লঙ্গা। এটির মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি সিক্স, ফাইবার, কপার, পটাশিয়াম প্রভৃতি উপাদান। হলুদ মূলত রান্নার জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে এবং ত্বক পরিচর্যায় ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে হলুদ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এছাড়াও শরীরের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতাকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করে হলুদ। হলুদকে ভারতীয় জাফরান বা সোনার মশলা হিসেবে বর্ণনা করা হয়। এটি এমন একটি উপাদান, যা আপনার স্বাস্থ্যকে সুরক্ষিত রাখতে সহায়তা করবে। বহু যুগ ধরেই আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে এটি ব্যবহার হয়ে আসছে। দীর্ঘদিন ধরে হলুদ গ্রহণের মাধ্যমে এর উপকারী প্রভাব গুলো অর্জন করা সম্ভব হয়। জেনে নিন আপনার স্বাস্থ্য রক্ষায় হলুদ উপকারী কেন? হলুদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যৌগটি হল কারকুমিন। কারকুমিন যেকোনো প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করে আমাদের স্বাস্থ্যকে সুরক্ষিত রাখে এবং এর মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান গুলি ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, লিভারের সমস্যার মতন গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলির সমাধান করে থাকে। যেমন, হৃদরোগের সমস্যা দূর হয়, ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে, আর্থারাইটিস এর ব্যথা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে, এইডস, ডায়াবেটিস প্রভৃতি রোগের চিকিৎসা করে, আলঝেইমার রোগের চিকিৎসা করে, হতাশা বা উদ্বেগের প্রতিকার করতে পারে, হজম ব্যবস্থার উন্নতি করে, সর্দি কাশি নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, ওজন হ্রাস করতে পারে, লিভারের সমস্যার সমাধান করে, প্রাক মাসিক কিংবা মাসিকের ব্যথার সমস্যাগুলির দূর করে, মূত্রনালীর সংক্রমণ কমাতে সহায়তা করে। এ ধরনের বহু সমস্যার সমাধান ঘটাতে পারে হলুদ। (২)
হলুদের উপকারিতা – Benefits of Turmeric in Bengali
দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় হলুদ রাখার ফলে এটি আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সাহায্য করে। এর মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টি-ক্যান্সার বৈশিষ্ট্যগুলো বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা এবং রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। হলুদ ফ্রী রাডিক্যালস এবং মহামারী জাতীয় রোগের অবস্থা উন্নতি ঘটাতে সহায়তা করে। এছাড়াও এটি ক্যানসারের কোষগুলিকে প্রভাব বিস্তার করতে বাধাদান করে, যার ফলে তা আটকানো সম্ভব হয়।হলুদ বাত, ত্বকের ক্যান্সার নিরাময়, যকৃতের অসুস্থতা, মূত্রনালীর সংক্রমণ সমস্যাগুলির সমাধান করে থাকে। দীর্ঘ সময় ধরে হলুদ খাদ্যতালিকায় ব্যবহার করলে উপকার শরীরের লক্ষ্য করা যায়। তবে হলুদ খাওয়া শুরু করার আগে বিস্তারে এর উপকার এবং অপকারী দিকগুলো সম্পর্কে জেনে নিন।
স্বাস্থ্যের জন্য হলুদের উপকারিতা – Health Benefits of Turmeric in Bengali
রান্নাঘরে একটি পুষ্টিকর খাদ্য তৈরি করতে হোক কিংবা কোনো প্যাক বানাতেই হোক, সর্বত্রই হলুদের গুনাগুন সম্পর্কে আমরা জেনেছি। তবে স্বাস্থ্য রক্ষায় হলুদ কি ভূমিকা পালন করে আসুন জেনে নিন।
১) লিভারের পরিশুদ্ধিকরণ করুন হলুদ দিয়ে : Detoxifies the Liver
লিভার শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ গুলির মধ্যে অন্যতম। লিভার সুরক্ষায় অন্যতম একটি ভেষজ উপাদান হলো হলুদ। হলুদের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদানগুলো যেকোনো ধরনের লিভার রোগের চিকিৎসা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে (৩)। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, হলুদের মধ্যে থাকা কারকুমিন উপাদানটি অক্সিডেটিভ বিরুদ্ধে লড়াই করে লিভারকে সুরক্ষিত রাখতে পারে। লিভারের ক্ষতির অন্যতম একটি প্রধান কারণ হলো এই অক্সিডেটিভ টেস্ট। এটি যকৃতের আঘাতকেও প্রতিরোধ করতে পারে এবং হেপাটিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে পারে। কারকুমিন মূলত অ্যালকোহলযুক্ত ফ্যাটি লিভার চিকিৎসা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। গবেষণায় লক্ষ্য করা গিয়েছে, এর মধ্যে থাকা স্বাস্থ্যকর উপাদান গুলি লিভারকে সুরক্ষিত রাখতে সহায়তা করে। এছাড়াও এর মধ্যে থাকা অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান গুলো যেকোনো ধরনের খাবার থেকে হওয়া সংক্রমণকে আটকাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। হলুদের মধ্যে থাকা কারকিউমিন লিভারকে শক্তিশালী করে তুলতে সাহায্য করে (৪)। যার ফলে লিভারের রোগ শরীরের ধারে-কাছে আসতে পারে না। এছাড়াও যারা ফ্যাটি লিভারের রোগের সমস্যায় ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে স্বস্তি মেলে। হলুদের মধ্যে থাকা উপাদানগুলো লিভারের জমে থাকা বর্জ্য পদার্থকে বের করে দিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে, যার ফলে লিভারের ক্ষতি হবার আশঙ্কা বহুলাংশে কমে যায়। (৫)
২) ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে হলুদের ভূমিকা : Diabetes
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো হলুদ। (৬) গবেষণায় লক্ষ্য করা গিয়েছে, দৈনিক যারা সকাল বেলা খালি পেটে কাঁচা হলুদ খায় তাদের দেহের অন্তরে এমন কিছু উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে যার প্রভাবে ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। যার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। তাই বলাই যায়, ডায়াবেটিসের মতন মারণ রোগে আক্রান্ত হতে যদি না চান তবে দৈনিক খালি পেটে অবশ্যই কাঁচা হলুদ গ্রহণ করুন। হলুদে থাকা কারকিউমিন অ্যান্টি ডায়াবেটিক এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও কাঁচা হলুদ ইনসুলিন হরমোনের ক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণে রাখে (৭)। যার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা সঠিক থাকে এবং অগ্নাশয় সুস্থ থাকে। হলুদের মধ্যে থাকা কারকিউমিন ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি রোধ করতেও সহায়তা করে। এছাড়া ডায়াবেটিস এর সাথে যুক্ত কিছু রোগ থেকেও মুক্তি দেয়। এছাড়া যেকোনো ধরনের প্রদাহ কিংবা অক্সিডেটিভ চাপ কেও নিয়ন্ত্রণে রাখে (৮)। কারকিউমিন কেবলমাত্র রক্তে গ্লুকোজের মাত্রাকে হ্রাসই করে না, তার পাশাপাশি রক্তের উচ্চ ফ্যাট নিয়ন্ত্রণে রাখে। কারকিউমিন বিটা সেলগুলোর কার্যকারিতাকে উন্নত করে ইনসুলিন তৈরি করে, যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। (৯)
৩) অনাক্রম্যতা বৃদ্ধিতে হলুদের ভূমিকা : Boost Immunity
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বৃদ্ধি ঘটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে হলুদ। হলুদের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান গুলো শরীরকে রোগ জীবাণু থেকে রক্ষা করে। এটি শরীরকে যে কোন ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। যা খাদ্যনালী কে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে। আমরা দৈনিক যে সমস্ত খাবার খাই তা সবসময় পরিচ্ছন্ন নাও হতে পারে। তার মধ্যে থেকেও অনেক সময় নানা জীবাণু আমাদের শরীরের ভেতরে যেতে পারে, যা কাঁচা হলুদ বা হলুদ গুঁড়ো দৈনিক খাদ্যতালিকায় রাখলে খাদ্যনালীকে সে সমস্ত ক্ষতিকারক জীবাণু সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে এবং যে কোনও ধরণের ব্যাথার হাত থেকে মুক্তি দেয়। এছাড়াও বর্তমানে আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় আমাদের মধ্যে অনেকেই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে, যার ফলে শরীর দুর্বল হয়ে ওঠে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তাই একে একে রোগ আমাদের ঘিরে ধরে। দৈনিক যদি এক গ্লাস দুধে এক চামচ হলুদ মিশিয়ে খাওয়া যায় সে ক্ষেত্রে এই সমস্ত সমস্যা থেকে সমাধান পাওয়া যায়। আসলে হলুদ দুধে থাকা বিভিন্ন উপকারী উপাদান গুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে যার ফলে কোন রোগ শরীরের কাছাকাছি আসতে পারে না এবং শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
৪) ক্যান্সার প্রতিরোধ করুন হলুদের সহায়তায় : Cancer
কোলন, পেট এবং ত্বকের ক্যান্সারের মতো রোগের নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে হলুদ। এর মধ্যে থাকা প্রতিরক্ষামূলক উপাদানগুলো ক্যান্সারের জীবাণুকে শরীর থেকে দূরে রাখে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, হলুদে থাকা কারকুমিন জাতীয় যৌগটি ক্যান্সারের সম্ভাবনা শরীর থেকে হ্রাস করতে পারে এবং এর বিস্তারকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। এছাড়া ওই যৌগটি কেমোথেরাপি কার্যকর করে তোলে এবং এই প্রক্রিয়াতে স্বাস্থ্যকর কোষগুলিকে সুরক্ষা প্রদান করে। (১০) শরীরকে সুস্থ করে তুলতে সহায়তা করে কারকিউমিন। প্রোস্টেট ক্যান্সার, কোষের মৃত্যুকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। এছাড়াও এটি যেকোনো প্রদাহের সাথে লড়াই করে শরীরকে প্রদাহ মুক্ত করে। গবেষণার লক্ষ্য করা গিয়েছে, কারকিউমিন প্রায় সমস্ত রকমের ক্যানসারের কোষ গুলিতেই একই প্রভাব বিস্তার করে (১১)। প্রোস্টেট, ফুসফুস এবং অগ্ন্যাশয় ক্যান্সারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি ক্যানসারের কোষগুলিকে মেরে ফেলে স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়তা করে (১২)। বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে যে, যারা দৈনিক কাঁচা হলুদ খায় তাদের প্রায় ছাপ্পান্ন রকমের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে এবং ক্যান্সারের কোষের বৃদ্ধি বন্ধ করে শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। (১৩)
৫) ওজন কমাতে হলুদের ভূমিকা : Weight Loss/Metabolism
বর্তমানে ফাস্টফুডের জীবনে ওজন নিয়ে সকলেরই একটা চিন্তা রয়েছে। তবে একটি সামান্য উপাদান দৈনন্দিন গ্রহণের ফলে আপনি আপনার ওজন কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন। কেননা এই উপাদানটি আপনার রান্না ঘরেই রয়েছে, হলুদ। কাঁচা হলুদের মধ্যে থাকা আন্টি ওবেসিটি বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন উপাদানগুলি শরীরের বাড়তি মেদ জমতে দেয় না এবং মেটাবোলিজমের হার বাড়িয়ে দেয় (১৪)। যার ফলে শরীরে বাড়তি মেদ জমার সম্ভাবনা হ্রাস পায়। হলুদের মধ্যে থাকা কারকিউমিন স্থূলতার সাথে সম্পর্কিত যেকোনো অস্বস্তি কে কমাতে পারে। এছাড়া এটি শরীর থেকে বাড়তি ফ্যাট বের করে দিতে সহায়তা করে (১৫)। যারা দৈনিক হলুদ গ্রহণ করেন তাদের শরীরে ফ্যাট কোষগুলির বৃদ্ধি হ্রাস পায়। মূলত হলুদের এনজিওজেনিক ক্রিয়াকলাপ গুলো এই ফ্ল্যাট টিস্যুগুলো কমাতে সাহায্য করে। এগুলো শরীরের যে সমস্ত টিস্যুগুলো ওজন বৃদ্ধিতে মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করে সেগুলিকে দমন করতে সহায়তা করে। স্থূলতা দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহের সাথে জড়িত যেহেতু হলুদ যে কোন প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করে তাই এটি ওজন বৃদ্ধির সমস্যার সমাধান করতে পারে (১৬)। হলুদের মধ্যে থাকা কারকিউমিন শরীরের ফ্যাট সংরক্ষণকারী কোষগুলির উৎপাদনে বাধা সৃষ্টি করে। কারকিউমিন ওজন বৃদ্ধিতে বাধা দেয় এবং বিপাকীয় প্রক্রিয়ার নিয়ন্ত্রণকে উন্নত করে। যথাযথ ডায়েট এবং ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন হ্রাসের সময়সীমা অনুসরণ করার পাশাপাশি খাদ্য তালিকায় দৈনিক হলুদ রাখা গুরুত্বপূর্ণ। (১৭)
৬) প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে হলুদের ব্যবহার : Anti-inflammatory
হলুদে থাকা কারকুমিন প্রদাহ নিয়ন্ত্রন করে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা টির উন্নতি ঘটায়। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, হলুদ হাঁড়ের চিকিৎসার পাশাপাশি যেকোনো জয়েন্টের ব্যথা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে (১৮)। আর্থারাইটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে কারকিউমিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, হলুদের মধ্যে থাকা প্রদাহজনিত বৈশিষ্ট্যগুলো অস্টিওআর্থারাইটিস এর লক্ষণগুলি কে কমাতে সহায়তা করে (১৯)। এছাড়া এটি হাঁটু ব্যথার প্রতিকার করতেও সহায়তা করে। বেশিরভাগ ধরনের পেশীবহুল ব্যথা, হাঁটুর ব্যথা কমাতে হলুদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে (২০)। হলুদের মধ্যে থাকা অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদানগুলো শরীরকে যেকোনো প্রদাহজনিত জীবাণুর হাত থেকেও রক্ষা করে এবং পেটে ব্যথা, হাঁটু ব্যথা, বাতের ব্যথার মতন সমস্যা গুলোর সমাধান করে থাকে। (২১)
৭) অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রদান করে থাকে হলুদ : Anti-oxidant
শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান গুলো প্রদান করে থাকে হলুদ, যা শরীরকে অ্যানিমিয়ার হাত থেকে রক্ষা করে। মূলত মেয়েদের ক্ষেত্রে অ্যানিমিয়া হওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। তাই মেয়েদের দৈনিক কাঁচা হলুদ খাওয়া প্রয়োজনীয়। এ ছাড়াও হলুদের মধ্যে থাকা কারকিউমিন লোহিত রক্ত কণিকা কে রক্ষা করে। এছাড়াও হলুদের মধ্যে থাকা আয়রন রক্তে আয়রনের ঘাটতি মেটায়। এছাড়াও শরীর থেকে যেকোন ধরনের বর্জ্য বের করে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে হলুদ। এছাড়াও হলুদের মধ্যে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদানগুলো যেকোনো ধরনের মাসিকের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেয়, মাসিকের পূর্ববর্তী সময়ে কিংবা মাসিক চলাকালীন সময় যে সমস্যা গুলো লক্ষ্য করা যায় সেগুলো কমাতে সহায়তা করে হলুদ। এছাড়াও এটি ক্ষত নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং রক্তসঞ্চালন ঘটাতে সাহায্য করে।
৮) হৃদযন্ত্রের সুরক্ষায় হলুদের ব্যবহার : Heart Health/Cholesterol
সারা বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর প্রায় ৩১ শতাংশ মানুষ হৃদরোগের কারণে মৃত্যুবরণ করেন, যা সংখ্যায় প্রায় ১৮ মিলিয়ন এর কাছাকাছি।(২২) হলুদে থাকা কারকিউমিন হৃদরোগের প্রতিরোধ করে। এর মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যগুলি কার্ডিও টক্সিসিটি এবং ডায়াবেটিসজনিত হার্টের সমস্যাগুলির সমাধান করতে সহায়তা করে। এছাড়াও এটি হার্টফেল এবং কার্ডিয়াক হাইপারট্রফি এর মতন সমস্যাগুলো সমাধান করতে সমর্থ। হলুদের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুনাগুন গুলি অনিয়মিত হার্টবিটকে প্রতিরোধ করতে পারে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, উচ্চ রক্তচাপের কারণে হার্ট অ্যাটাকের মতন সমস্যাগুলি হতে পারে, হলুদ এগুলিকেও প্রতিরোধ করতে পারে। তীব্র করণারি সিনড্রোম যুক্ত ব্যাক্তিদের মধ্যে কারকিউমিন কোলেস্টেরল এবং খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রাকে কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত কাঁচা হলুদ খেলে স্ট্রোকের সম্ভাবনা অনেকটা কমে যায়। কেননা কাঁচা হলুদের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যগুলো স্ট্রোকের পরবর্তী চিকিৎসায় অনেক উপকার করে। এছাড়াও কাঁচা হলুদ হার্টকে বিভিন্ন ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। এছাড়া অপারেশনের পরে যে সমস্ত হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা থাকে সেগুলো প্রতিরোধ করতেও সাহায্য করে থাকে কাঁচা হলুদ। তাই দৈনিক খাদ্যতালিকায় কাঁচা হলুদ রাখার চেষ্টা করুন। (২৩)
৯) হজম ক্ষমতা বৃদ্ধিতে হলুদের ভূমিকা : Digestion
হলুদের মধ্যে থাকা কারকিউমিন গ্যাস্ট্রিক আলসারের চিকিৎসা করতে পারে। কারকিউমিন এর এই অ্যান্টি ইউলার ক্রিয়া-কলাপ তার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যকে উদ্ভূত করে (২৪)। কারকিউমিন এর অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি প্রভাব গুলি খাদ্যনালীতে থাকা প্রদাহের চিকিৎসা করে। এছাড়াও কারকিউমিনে থাকা উপাদানগুলি গ্যাস্ট্রোসফেজিয়াল ডিজিজের চিকিৎসা করতে সহায়তা করে (২৫)। আলসারেটিভ কোলাইটিস এর চিকিৎসার ক্ষেত্রে হলুদের ভূমিকা রয়েছে। এটি হজমের উন্নতি ঘটিয়ে প্রদাহজনিত পেটের রোগ, কোলোরেক্টাল ক্যানসার, লিভারের রোগ এবং ডায়রিয়ার সমস্যার সমাধান করতে পারে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যারা নিয়মিত হলুদ খায় তাদের ক্ষেত্রে হজমে সহায়ক পাচকরস এর ক্ষরণ বেড়ে যায়। যার ফলে বদহজমের সমস্যা কমে যায়। সেইসঙ্গে গ্যাস অম্বল এবং অ্যাসিডিটির মতো সমস্যা কমতে থাকে। যার ফলে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ইনফেকশন কমাতে কাঁচা হলুদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। (২৬)
১০) মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় হলুদের ভূমিকা : Brain Health/Alzheimer’s disease
মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে হলুদ। আলঝেইমার রোগে আক্রান্ত রোগীদের হলুদের মধ্যে থাকা কারকিউমিন শারীরিক অবস্থার উন্নতি ঘটায়। হলুদের কারকিউমিন এ উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য গুলিকে এ ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করতে লক্ষ্য করা যায় (২৭)। আলঝেইমার এমন এক ধরনের রোগ যা স্নায়ু কোষ কে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। কারকিউমিন এগুলির সাথে লড়াই করে আলঝেইমার প্রতিরোধ করে। হলুদে উপস্থিত অপর একটি রাসায়নিক উপাদান হলো টিউমারন, যা মস্তিষ্কের কোষকে উদ্দীপ্ত করতে সহায়তা করে। এটি আলঝেইমার রোগ কিংবা নিউরো ডিজেনারেটিভ যে কোন অবস্থার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং মানসিক স্বাস্থ্যকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে (২৮)। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে কারকিউমিন মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। এটি ইনসুলিনের গ্লুকোজ বাড়িয়ে ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি কে প্রতিহত করে। এর পাশাপাশি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে কোন ধরনের ডিপ্রেশনের সমস্যার সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে হলুদ। এটি স্ট্রেস, ডিপ্রেশন বা হতাশা আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে (২৯)। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, হলুদে উপস্থিত কারকিউমিন হতাশার জন্য একটি অন্যতম নিরাপদ এবং প্রাকৃতিক চিকিৎসা। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, কারকিউমিন অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট এর কার্যকারিতা বাড়াতে সক্ষম। তাই মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় দৈনিক এক টুকরো করে কাঁচা হলুদ কিংবা হলুদের গুঁড়ো খাওয়া প্রয়োজন। (৩০)
১১) প্রাকৃতিক বেদনা নাশক হিসেবে পরিচিত হলুদ : Natural Pain Killer
প্রাকৃতিক বেদনানাশক উপাদান হিসেবে পরিচিত হলুদ। এটির মধ্যে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যগুলো যেকোনো ধরনের ব্যথা কমাতে সহায়তা করে। বাতের ব্যথা, হাঁটুর ব্যথা, বিভিন্ন ব্যথার মতো গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলির সমাধানে হলুদ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও পেটের ব্যথা কিংবা পেটের সংক্রমণ থেকেও শরীরকে সুস্থ রাখে। আর্থারাইটিস এর মতন গুরুতর সমস্যার সমাধানও হলুদের সাহায্য করা যায়। হলুদের মধ্যে থাকা কারকিউমিন যৌগটি যেকোনো ধরনের ব্যথা কমাতে সহায়তা করে। হঠাৎ করে গুরুতর চোট আঘাত পেলে সে ক্ষেত্রে যে কোন ধরনের ওষুধের তুলনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে হলুদ। এছাড়াও যারা দীর্ঘদিন ধরে বাতের ব্যথায় ভুগছেন তাদের মধ্যে হলুদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে থাকা কারকিউমিন নানা রকম ভাবে আর্থ্রাইটিসের হাত থেকে আমাদের বাঁচায়। এ ছাড়াও কাঁচা হলুদ অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। শরীরের যেকোনো ধরনের হাড়ের ব্যথা কিংবা পেশীর ব্যথা কমাতে সহায়তা করে। এ ধরনের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে ফিজিও থেরাপির পাশাপাশি প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে যদি হলুদের ব্যবহার করা যায় সে ক্ষেত্রে সহজেই এর থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়াও দাঁতের ব্যথা এসমস্ত ক্ষেত্রেও হলুদের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। এবং অন্যতম আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হলো সাইনাস। সাইনাস এর মাথা ব্যথায় কষ্ট পেলেই এক গ্লাস হলদি দুধ নিমেষে সেই সমস্যার সমাধান করে। এর মধ্যে থাকা অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি উপাদান গুলো শরীরের যে কোন অংশের ব্যথা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও যেকোন ধরনের চোট-আঘাতের সমস্যা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায় হলুদ এর সহায়তায়।
১২) মাসিকের যন্ত্রণা কমাতে হলুদের ব্যবহার : Reduces Menstrual Pain
মাসের একটি বিশেষ সময়ে মহিলাদের শরীরে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা যায়। তা মাঝেমধ্যে এতটাই কষ্টকর হয়ে যায় যে সহ্যসীমার বাইরে চলে যায়। এমন পরিস্থিতিতে যদি অল্প করে হলুদ খাওয়া যায় তাহলে এই সমস্যার থেকে উপকার বলে। কারণ হলুদের মধ্যে থাকা অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি উপাদান গুলি মাসিক সংক্রান্ত যে কোনও কষ্ট পেটের যন্ত্রণা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। মূলতঃ হলুদকে ইস্ট্রোজেন হরমোনের উদ্ভিজ্জ উৎস হিসেবে বর্ণনা করা হয়। মেয়েদের শরীরে থাকা অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ হরমোন ইস্ট্রোজেন। মেনোপজ এর সময় পেটে ব্যথা, ডিপ্রেশন কাটাতে কাঁচা হলুদের ব্যবহার অনবদ্য। কারণ এর মধ্যে থাকা অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরী, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যগুলো যেকোনো ধরনের ব্যথার থেকে আরাম প্রদান করে এবং মানসিক শান্তি প্রদান করে থাকে। শারীরিক অস্বস্তি কাটিয়ে স্বাভাবিক হতে সাহায্য করে। এছাড়াও হলুদ প্রাক মাসিক বিভিন্ন লক্ষণ গুলি এবং সমস্যাগুলি থেকে মুক্তি প্রদান করে থাকে। কেননা এটি পিএমএস এর লক্ষণগুলির তীব্রতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। যার ফলে মাসিকের ক্ষেত্রে হলুদের ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ।(৩১)
১৩) বাতের ব্যথা কমাতে হলুদের ব্যবহার : Arthritis
ইতিমধ্যেই আমরা জেনে নিয়েছি যে, যেকোনো ধরনের ব্যথা কমাতে হলুদের ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে বাতের ব্যথা, হাঁটুর ব্যথা, যে কোন ধরনের পেশি ব্যথা গুলোর সমস্যার ক্ষেত্রে হলুদ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। হলুদের মধ্যে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদানগুলো শরীরের ভেতর থেকে ব্যথা নিরাময়ে সহায়তা করে। গবেষণায় লক্ষ্য করা গিয়েছে, হলুদের মধ্যে থাকা কারকিউমিন যেকোনো ধরনের প্রদাহ কে হ্রাস করতে সহায়তা করে। এছাড়াও আর্থারাইটিস কিংবা হার্টের সমস্যায় যারা ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রেও হলুদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। হলুদের প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্য গুলি অস্টিওআর্থারাইটিস এর লক্ষণগুলির চিকিৎসা করতেও সহায়তা করে। এছাড়া যাদের হাঁটু ব্যথা, পেশীবহুল ব্যথা রয়েছে সেগুলি সমাধান করতে হলো সহায়তা করে। হলুদ রক্তে অক্সিজেন প্রেরণ করে। যেগুলো শরীরের বিভিন্ন কোষে পৌঁছে রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি ঘটায় এবং শরীরের যেখানে যেখানে ব্যথার সৃষ্টি হয়। সেখানে সঠিক রক্ত সঞ্চালনের ফলে রক্ত চলাচল সঠিকভাবে হয় এবং যে কোন ধরনের ব্যথা বা ফুলে যাওয়ার মতন সমস্যাগুলির সমাধান হয়। বাতের ব্যথা এক ধরনের দীর্ঘ স্থায়ী ব্যথা। হলুদের ব্যবহার করলে তার উপকারী ফল লাভ করা যায়।
১৪) প্রাকৃতিক জীবাণুনাশক হিসেবে হলুদের ব্যবহার : Natural Antiseptic/Wounds Healing
হলুদের মধ্যে থাকা অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ভাইরাল বৈশিষ্ট্যগুলো যেকোনো ধরনের ব্যাকটেরিয়া কে সহজেই ধ্বংস করে দিতে পারে। বিভিন্ন রকম পেটের অসুখ কিংবা ত্বকের রোগের ক্ষেত্রে হলুদের ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ। খাবারের মাধ্যমে পেটে যদি কোনরকম জীবাণুর সংক্রমণ হয়, সে ক্ষেত্রে কাঁচা হলুদ খালি পেটে মধু কিংবা আঁখের গুড় দিয়ে গ্রহণ করলে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হয়। কিংবা ত্বকের কোথাও কোন রকম ক্ষত দেখা দিলে কিংবা পোকামাকড়ের কারণে যদি জীবাণুর সংক্রমণ ঘটে সে ক্ষেত্রে তার ওপর হলুদ এবং গোলাপ জল মিশ্রন করে যদি লাগানো যায় তার নিরাময় পাওয়া যায়। হলুদের মধ্যে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য থাকার কারণে যে কোন জীবাণুকে ধ্বংস করতে সহায়তা করে হলুদ। তাই নিয়মিত সকাল বেলা খালি পেটে কাঁচা হলুদ খাওয়া উচিত। এটি শরীরকে যেকোনো ধরনের জীবাণুর সংক্রমণ থেকে রক্ষা করবে। হলুদের কারকিউমিন অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে আমাদের খাদ্যনালী কে রক্ষা করে। আমরা প্রত্যেক দিন যে খাবার খাই তার মধ্যে থেকে অনেক সময় পেটের ভেতর জীবাণু যেতে পারে। তাই খাবারে কাঁচা হলুদ বা হলুদ গুঁড়ো ব্যবহার করবো খাদ্যনালী ক্ষতিকর জীবাণুর সংক্রমণ থেকে রক্ষা করা যায় এবং খাদ্যনালীর প্রদাহের সম্ভাবনা কম থাকে।
১৫) সর্দি কাশি নিরাময়ে হলুদের ভূমিকা : Cough
বর্তমানে আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হলো সর্দি কাশি। ছোট থেকে বড় প্রায় সব ঘরেই এই সমস্যা লেগেই রয়েছে (৩২)। কারো কারো আবার এলার্জির কারণে কিংবা শারীরিক কারণে বা জ্বরের মত সমস্যার কারণে সর্দি-কাশি দেখা যায়। তবে এই সমস্যা থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া যায় হলুদের সহায়তায়। হলুদের মধ্যে থাকা কারকিউমিন যেকোনো ধরনের সর্দি-কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা কমাতে সহায়তা করে (৩৩)। এছাড়াও কাঁচা হলুদ আমাদের শরীরের অনাক্রম্যতা বাড়াতে সাহায্য করে, যা শরীরকে সর্দি-কাশির মতন রোগগুলো থেকে আরাম দেয়। কাঁচা হলুদে থাকা ভিটামিন সি সর্দি কাশি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। রাতে শুতে যাওয়ার আগে যদি হলুদ দুধ খাওয়া যায় সে ক্ষেত্রে কাশি সর্দি এবং যেকোনো ধরনের শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতার থেকে আরাম পাওয়া যায়। হলুদ ফুসফুসের প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে। এছাড়াও এটি হাঁপানি, ব্রংকাইটিস এর মতন শ্বাসজনিত রোগ গুলির চিকিৎসা করতে সহায়তা করে। কারকিউমিন হাঁপানিজনিত প্রদাহ কম করতে পারে। এর পাশাপাশি চিকিৎসা প্রদান করে। হলুদের প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্যগুলো সাইনাসের ক্ষেত্রেও অস্বস্তি হ্রাস করে ব্যথা থেকে নিষ্পত্তি দেয়। (৩৪)
ত্বকের জন্য হলুদের উপকারিতা – Skin Benefits of Turmeric in Bengali
সুন্দর ঝলমলে, উজ্জ্বল ত্বক সকলেরই একটা স্বপ্ন থাকে। সেক্ষেত্রে হলুদ একটি অন্যতম উপাদান যা স্কিনের যে কোন রকম সমস্যায় ব্যবহার করা যায়। এছাড়া স্কিন থেকে রোদে পোড়া দাগ, বলিরেখা, দাগ কমাতে সহায়তা করে হলুদ। যেকোনো ধরনের বাজারজাতও প্রোডাক্ট কে হার মানিয়ে দেবে হলুদের ব্যবহার। তবে দীর্ঘদিন ধরে এর ব্যবহার করলেই সে ক্ষেত্রে প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। আসুন তাহলে জেনে নিন কিভাবে হলুদ দিয়ে নিজেকে আরও সুন্দর এবং জেল্লাদার করে তুলবেন?
১) ব্রণ দূরীকরণে হলুদের ব্যবহার : Acne Treatment
ব্রণ এবং ব্রণও কমে যাওয়ার ফলে দাগ সব একটি অত্যন্ত চিন্তার বিষয়। এই সমস্যার সমাধান মূলত যাদের তৈলাক্ত ত্বক তাদেরই অধিকাংশ ভুগতে লাগে। কিন্তু এই সমস্যা থেকে সমাধান হওয়ার জন্য হাতের কাছেই রয়েছে হলুদ। মূলত যারা ব্রণের সমস্যায় ভুগছেন তাদের কাছে কাঁচা হলুদ একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান। এর মধ্যে থাকা অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়া এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদানগুলো ত্বকে যেকোনো ইনফেকশনের হাত থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও এটি ত্বককে উজ্জ্বল করতে সহায়তা করে। এছাড়াও নিয়মিত যদি হলুদ মেশানো দুধ খাওয়া যায় সেক্ষেত্রে ত্বকের ভেতর থেকে টক্সিন বেরিয়ে যায়। এর পাশাপাশি কোলাজেনের উৎপাদন বেড়ে যায়। যার ফলে ত্বক ভেতর থেকে উজ্জ্বল এবং প্রাণোচ্ছল দেখায় এবং বয়সের ছাপ কমতে থাকে। এর পাশাপাশি ব্রণের সমস্যা দূর হয়। হলুদের অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল প্রভাবগুলো ব্রণ সহ ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার চিকিৎসা করতে পারে। যেকোনো ধরনের প্রদাহের সাথে লড়াই করে। ব্রণর সাথে সম্পর্কিত প্রদাহ কিংবা লালচে ভাব এর চিকিৎসা করতে বিশেষভাবে সহায়তা করে হলুদ। (৩৫)
কিভাবে ব্যবহার করবেন?
- ব্রণের সমস্যা কমাতে ফেস মাস্ক হিসেবে হলুদ ব্যবহার করতে পারেন।
- এক্
Community Experiences
Join the conversation and become a part of our vibrant community! Share your stories, experiences, and insights to connect with like-minded individuals.