এলোভেরা (ঘৃতকুমারী) এর উপকারিতা, ব্যবহার এবং ক্ষতিকর দিক – Aloe Vera Benefits, Uses and Side Effects in Bengali

Written by Dinesh
Last Updated on

বর্তমানে সৌন্দর্য বৃদ্ধিকারী উপাদান গুলির মধ্যে একটি অন্যতম সুপরিচিত নাম হল অ্যালোভেরা। অ্যালোভেরা রূপচর্চায় ব্যবহারের পাশাপাশি এটি শরীরের নানা রোগ কমাতে সহায়তা করে। অ্যালোভেরার গুনাগুন সর্বত্র সুপরিচিত। অ্যালোভেরা শরীরকে ঠান্ডা রাখার পাশাপাশি সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত, বসন্ত সব ঋতুতেই অ্যালোভেরার ব্যবহার করা যায় এবং এটি সহজেই পাওয়া যায়। অ্যালোভেরাতে ভিটামিন এ, বি, সি, ই এবং ফলিক অ্যাসিডের মতন উপাদানগুলি পাওয়া যায়। অ্যালোভেরা প্রচুর সৌন্দর্য প্রসাধনীতে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া স্বাস্থ্যরক্ষাতেও অ্যালোভেরার ব্যবহার করা হয়। এমনকি বহু ঔষধ তৈরীতে অ্যালোভেরা ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

অ্যালোভেরার জেল এর মধ্যে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্যগুলো ছোটখাটো ব্যথা, পুড়ে যাওয়া, কেটে যাওয়ার মতন সমস্যা গুলিতে খুব ভালোভাবে কাজ করে। অ্যালোভেরার পাতার পাশাপাশি আলোভেরা জেল কিংবা অ্যালোভেরার জুস আমাদের শরীরের নানা রোগ-ব্যাধি কমাতে সাহায্য করে। মূলতঃ অ্যালোভেরা জুসকে আমরা শরীরের একটা উপকারী হেলথ ড্রিঙ্ক হিসেবে ব্যবহার করতে পারি। অ্যালোভেরার গাছ বাড়ির বারান্দায় কিংবা ছাদে সহজেই তৈরি করা যেতে পারে। অ্যালোভেরার মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক ঔষধী যে কোনো রকম রোগকে চটপট কমিয়ে শরীরকে ভালো করে তোলে। প্রাচীন যুগ থেকেই সৌন্দর্য বৃদ্ধিকারী উপাদান হিসেবে অ্যালোভেরা ওরফে ঘৃতকুমারীর ব্যবহার হয়ে আসছে। প্রাচীন যুগে সুন্দরী রাজরানীরা তাদের রূপচর্চায় অ্যালোভেরার ব্যবহার করত। ()

সৌন্দর্য এবং স্বাস্থ্য রক্ষায় অ্যালোভেরার ব্যবহার সুদীর্ঘকাল ধরে চলছে। এছাড়াও বিভিন্ন কবিরাজ এবং বৈদ্য মশাইরাও বিভিন্ন ঔষধি প্রস্তুতিতে অ্যালোভেরার ব্যবহার করে এসেছেন। অ্যালোভেরা গাছ যেকোনো পরিবেশেই তৈরি হতে পারে। এটি অনেকটা ক্যাকটাসের মতো দেখতে কিন্তু গায়ে বড় কাটা থাকে না। এটি সবুজ রঙের হয় এবং এর ভেতরে এক ধরনের থকথকে সাদা রংয়ের জেল পাওয়া যায়। যেটি একটি ম্যাজিক উপাদান। পৃথিবীতে প্রায় ২৫০ রকমের অ্যালোভেরা জন্মায়। তার মধ্যে দু’রকমের অ্যালোভেরা বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়। অ্যালোভেরার রস পেট ঠান্ডা রাখার পাশাপাশি বহু রোগের জীবানু নাশ করে থাকে। কারখানায়য় ও ল্যাবরেটরীতে তৈরি প্যাকেটজাত অ্যালোভেরা জেল ব্যবহারের তুলনায় যদি সরাসরি গাছ থেকে অ্যালোভেরার পাতা কেটে নিয়ে ব্যবহার করা হয়, সেটি বেশি কার্যকরী। গোটা বিশ্ব জুড়ে অ্যালোভেরা গাছের রস এবং জেল বিক্রি হয়। অ্যালোভেরা জেল থেকে বিপুল পরিমাণ অ্যামিনো অ্যাসিড পাওয়া যায়। যা শরীরের জন্য খুব উপকারী। এছাড়াও সৌন্দর্য বৃদ্ধিকারী উপাদান হিসেবে ও অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করা হয়। কখনও কখনও ময়েশ্চারাইজার হিসেবেও এটি কিংবা ফেসওয়াশ বা শাবানের মধ্য দিয়েও ব্যবহার করা হয়। মূলত দেহের যে অংশে দাগছোপ কিংবা সানবার্ন রয়েছে সেই সমস্ত অংশে দাগ কমাতে অ্যালোভেরার ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আজকে জানবো অ্যালোভেরার বিভিন্ন উপকারিতার দিক গুলি। যেগুলি দীর্ঘদিন ধরে আমাদের সমস্যার সমাধান করে চলেছে অ্যালোভেরা। ()

এলোভেরার উপকারিতা – Benefits of Aloe Vera in Bengali

হাজার হাজার বছর ধরে বিভিন্ন কাজে অ্যালোভেরা গাছের ব্যবহার হয়ে আসছে। অ্যালোভেরা গাছটি মূলতঃ দেশের পশ্চিমে অধিক জনপ্রিয়। বিভিন্ন প্রসাধনী, পণ্য, ওষুধ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অ্যালোভেরা ব্যবহার হয়ে আসছে। এই উদ্ভিদ থেকে ত্বকের যেকোনো ধরনের সমস্যার সমাধান সম্ভব হয়। এছাড়াও গবেষণায় দেখা গিয়েছে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রোগ যেমন ডায়াবেটিস, ওজন বৃদ্ধির মত সমস্যাগুলির ক্ষেত্রেও অ্যালোভেরার ব্যবহার উল্লেখযোগ্য। অ্যালোভেরা বর্তমানে খাবার, প্রসাধনী দ্রব্য, খাদ্য পরিপূরক, বিভিন্ন রূপে ব্যবহার হয়ে থাকে। আলোভেরার সর্বাধিক বৈশিষ্ট্য হলো ত্বকের বিভিন্ন ক্ষত নিরাময়ে সহায়তা করে। এছাড়াও অ্যালোভেরা শরীরের অভ্যন্তরীণ স্বাস্থ্যের পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে সহায়তা করে। এর মধ্যে রয়েছে পচাত্তরটির বেশি শক্তিশালী উপাদান। যার মধ্যে ভিটামিন, খনিজ, স্যালিসিলিক, এনজাইম, অ্যামিনো অ্যাসিড এবং শর্করা রয়েছে। পৃথিবীতে যত রকমের পুষ্টিগুণসম্পন্ন উদ্ভিদ রয়েছে অ্যালোভেরা সেগুলির মধ্যে অন্যতম। তবে এটি শরীরের বিভিন্ন বেদনা কিংবা প্রদাহ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এটি বিভিন্ন প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করে শরীরের অনাক্রম্যতাকে জোরদার করে এবং ডায়াবেটিসের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের চিকিৎসা করে সমাধান করে। এর পাশাপাশি অ্যালোভেরা ত্বকের যত্নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জেনে নিন আমাদের ত্বক, চুল এবং স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে আলোভেরা কি কিভাবে উপকার করে? ()

ত্বকের জন্য এলোভেরার উপকারিতা – Skin Benefits of Aloe Vera in Bengali

প্রাচীনকাল থেকে ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরার ব্যবহার হয়ে আসছে। এটি ত্বককে সুন্দর করে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। নিয়মিত অ্যালোভেরা জুস পান করার ফলে আমাদের পেট পরিষ্কার থাকে, যার ফলে সেই জেল্লা মুখে প্রকাশ পায়। অ্যালোভেরা জেল ব্যবহারকারীদের ত্বকে কোন রকম চর্মরোগ, মেচেদা, ব্রণের সমস্যা থাকে না। তবে বাজার থেকে প্যাকেটজাত অ্যালোভেরা জেল না কিনে সরাসরি অ্যালোভেরা গাছের পাতা থেকে জেল নিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। জেনে নিন ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরার উপকারী দিক গুলি :

১) উজ্জ্বল ত্বকপান অ্যালোভেরার সহায়তার : Glowing Skin

অ্যালোভেরার মধ্যে জলের আধিক্য বেশি থাকায় এটি ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সহায়তা করে। মূলত ত্বকে ময়েশ্চারাইজার হিসেবে অ্যালোভেরা ব্যবহার করা যায় ()। সে ক্ষেত্রে এটির মধ্যে কোনো চটচটে ভাব থাকে না। এটি সরাসরি ত্বকে মিশে গিয়ে ত্বককে ভেতর থেকে দাগছোপহীন এবং উজ্জ্বল করে তুলতে সাহায্য করে (), ()। যাদের তৈলাক্ত ত্বকের সমস্যা কিংবা ব্রণের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য অ্যালোভেরা জেল একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এছাড়াও শীতকালে যাদের শুষ্ক ত্বকের সমস্যা রয়েছে তাদের এই সমস্যা দূর করতে অ্যালোভেরা মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করে ()। দৈনিক অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করলে ত্বক তার আর্দ্রতা ফিরে পায় এবং ভেতর থেকে ত্বক উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। ()

কিভাবে ব্যবহার করবেন ?

  • অ্যালোভেরা গাছের সবুজ অংশের ভেতর থেকে সাদা অংশের যে জেল পাওয়া যায় সেটি বের করে নিন।
  • এবার এটি ভালো করে মিক্সিতে ফেটিয়ে নিয়ে রস তৈরি করুন।
  • তবে এটি সরাসরি ত্বকে ব্যবহার করার আগে কানের পিছনে অল্প লাগিয়ে দেখে নিন কোন রকম এলার্জি হচ্ছে কিনা।
  • যদি কোনরকম সমস্যা না হয় সরাসরি যে কোন সাবান বা ফেসওয়াশ দিয়ে মুখটা ধুয়ে এটি ব্যবহার করতে পারেন।
  • কিন্তু যদি কোনো রকম অ্যালার্জি দেখতে পান সে ক্ষেত্রে নারকেল তেল বা অলিভ অয়েল এর সাথে মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে রাখুন।
  • এবং এক ঘণ্টা লাগিয়ে রাখার পর মুখটা যদি তৈলাক্ত ত্বক হয় উষ্ণ গরম জলে ধুয়ে ফেলুন।
  • আর যদি শুষ্ক ত্বক হয় সে ক্ষেত্রে সাধারণ জল দিয়ে মুখটা ধুয়ে নিন।

২) ব্রণের সমাধান করুন অ্যালোভেরা দিয়ে : Acne/Pimples

যাদের তৈলাক্ত ত্বক তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হল ব্রণ। তবে ব্রণর সমস্যার সমাধান করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে অ্যালোভেরা। মুখের সৌন্দর্য ধরে রাখতে অ্যালোভেরা জেল মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করে। অ্যালোভেরার জেলে থাকা অ্যান্টি-ফাঙ্গাল, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণাগুণগুলি ত্বকে যে কোন ধরনের জীবাণুকে নাশ করে ব্রণ কমাতে সাহায্য করে এবং ত্বকের যে কোন ধরনের দাগ ছোপ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও এর মধ্যে থাকা উপাদান গুলি ত্বকের ডেড সেল দূর করে নতুন কোষ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যার ফলে ব্রণের সমস্যা চিরতরে সমাধান হয়। মূলত ব্রণের চিকিৎসায় ব্যবহারকারী ওষুধ গুলির মধ্যেও অ্যালোভেরা জেলের ব্যবহার করা হয়। এটি ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করার পাশাপাশি ত্বকে এক ধরনের শীতলতা প্রদান করে। যেটি ব্রণর সমস্যা দূরে রাখতে সহায়তা করে। এটি ব্রণর বৃদ্ধি কমিয়ে ব্রণের ক্ষত নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ()

কিভাবে ব্যবহার করবেন ?

  • ব্রণের সমস্যার সমাধান করতে প্রতিদিন রাতে ব্রণের ওপর সরাসরি অ্যালোভেরা জেল প্রয়োগ করুন এবং পরদিন সকালে উঠে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
  • এছাড়াও অ্যালোভেরা জেলের সাথে লেবুর রস মিশিয়ে ব্রণের ওপর লাগিয়ে রাখতে পারেন।
  • পরদিন সকালে উঠে মুখটা ধুয়ে নেবেন।
  • এর ফলে ব্রণের কোনরকম দাগ ত্বকের ওপর পড়বে না।
  • তবে ত্বক যদি সংবেদনশীল হয়, তাহলে লেবুর রস ব্যবহার না করে কেবলমাত্র অ্যালোভেরার জেল ব্যবহার করুন।

৩) বলিরেখা দূর করতে অ্যালোভেরা জেল এর ব্যবহার : Anti Aging/Wrinkles

অ্যালোভেরা কেবলমাত্র শরীরের ওপর থেকেই নয় বরং ভিতর থেকে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে থাকে। যারা দৈনিক অ্যালোভেরা জেল খান তাদের ত্বকে বার্ধক্যজনিত সমস্যা গুলি দেখা যায়না (১০)। মূলতঃ অ্যালোভেরা ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন বৃদ্ধি করে। যার ফলে বয়স বাড়লেও ত্বকে বলিরেখার সমস্যা দেখা যায় না। এছাড়াও বয়সের যে লক্ষণগুলো তার মধ্যে দেখা যায় সেগুলি অ্যালোভেরা প্রকাশ পেতে দেয় না (১১)। বার্ধক্যজনিত লক্ষণগুলি থেকে অ্যালোভেরা ত্বককে দূরে রাখে। এছাড়াও অ্যালোভেরা ত্বকের ইলাস্টিসিটি বজায় রাখতে সাহায্য করে। যার ফলে ফাইন লাইন, বলিরেখার এবং ব্রণের দাগের মতো সমস্যাগুলি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। (১২)

কিভাবে ব্যবহার করবেন?

  • দৈনিক সকাল বেলা খালি পেটে এক চামচ করে অ্যালোভেরার রস খেতে পারেন।
  • এছাড়াও অ্যালোভেরা জেলের সাথে সামান্য অলিভ অয়েল এবং ওটমিল মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে নিন।
  • এবার ওই পেস্ট মুখে লাগিয়ে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন।
  • এরপর পরিষ্কার জল দিয়ে মুখটা ধুয়ে নিন।
  • সপ্তাহে দুই দিন এই পেস্ট ব্যবহার করার ফলে ত্বকের বলিরেখা সমস্যা দূর হবে।

৪) রোদে পোড়া ভাব কমাতে অ্যালোভেরার ব্যবহার : Sunburn

দৈনন্দিন দৌড় ঝাপের জীবনে আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হল সানবার্ন অর্থাৎ রোদে পোড়া ভাব। ভারতের মতো গ্রীষ্মপ্রধান দেশে অবস্থান করার ফলে বছরের বেশিরভাগ সময়ই আমাদের এখানে গ্রীষ্মকাল। যার ফলে রোদের তীব্রতাও খুব। সেই কারণে ছোট-বড় প্রায় সকলের মধ্যেই রোদে পোড়া ভাব লক্ষ্য করা যায়। তবে শুরুতে এটি স্বল্প ভাবে হলেও বাড়তে বাড়তে অতিরিক্ত রোদে থাকার ফলে ত্বক ক্যানসারের মতো সমস্যাও হতে পারে সানবার্ন থেকে। তাই এর যথাযথ চিকিৎসা প্রয়োজন। আর এ ধরনের চিকিৎসায় অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো অ্যালোভেরা। অ্যালোভেরা ত্বককে উজ্জ্বল করতে এবং রোদে পোড়া ভাব কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

কিভাবে ব্যবহার করবেন?

  • প্রতিদিন রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে শরীরের যে অংশগুলো তে সানবার্ন রয়েছে সেগুলি ভাল করে জল দিয়ে ধুয়ে নিয়ে সেই অংশে পুরু করে অ্যালোভেরা জেল লাগিয়ে রাখুন।
  • এবং পরদিন সকালে উঠে পরিষ্কার জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
  • দৈনিক অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করার ফলে এক সপ্তাহের মধ্যেই ত্বকে রোদে পোড়া ভাব কমতে থাকবে।
  • এটি নিত্যদিন ব্যবহারের ফলে সানবার্নের সমস্যা চিরতরে দূর হবে।

৫) কাটাছেঁড়ায় অ্যালোভেরার ব্যবহার : Cuts & Wounds (Antibacterial, Antiseptic)

Cuts & Wounds (Antibacterial, Antiseptic)
Image: Shutterstock

কাটা-ছেড়া কিংবা যেকোনো ধরনের ক্ষত নিরাময়ে অ্যালোভেরার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এটি নতুন কোষ গঠনে সহায়তা করে। যার ফলে যে কোনো ধরনের ক্ষত নিরাময়ে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। গবেষণায় লক্ষ্য করা গিয়েছে, ত্বক এবং চুলের বিভিন্ন ক্ষত নিরাময়ে অ্যালোভেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়া অ্যালোভেরা যে কোনো ধরনের চুলকানি কিংবা ত্বকের রোগ কমাতেও সহায়তা করে। এই উদ্ভিদটি যেকোনো কাটা দাগ কিংবা গায়ের ওপর ক্ষতর কার্যকরীভাবে চিকিৎসা করে। গবেষণার লক্ষ্য করা গেছে, যে সমস্ত লোকেরা রেডিয়েশন নিয়ে থাকেন তাদের ক্ষেত্রে অ্যালোভেরার ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও রক্ত পরা কমাতেও সহায়তা করে অ্যালোভেরা। (১৩)

কিভাবে ব্যবহার করবেন ?

  • কাটা জায়গাটিতে রক্ত তুলো দিয়ে পরিস্কার করে নিয়ে সেটির ওপর সরাসরি অ্যালোভেরা জেল প্রয়োগ করুন।
  • অ্যালোভেরার মধ্যে থাকা উপাদান গুলি নতুন কোষ তৈরি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
  • যার ফলে খুব শীঘ্রই ক্ষত নিরাময় করে অ্যালোভেরা জায়গাটির বেদনা কমাতে সহায়তা করবে।
  • নির্দিষ্ট সময় পরপর জায়গাটি পরিষ্কার করে অ্যালোভেরা জেল লাগান।
  • দেখবেন দু’দিনেই শুকোতে শুরু করেছে এবং কোন দাগ ছোপ ছাড়াই ত্বকের যেকোন কাটাছেঁড়া কমাতে সহায়তা করবে অ্যালোভেরা।

৬) স্ট্রেচ মারকস কমাতে অ্যালোভেরার ব্যবহার : Stretch Marks

হঠাৎ করে মোটা হয়ে গেলে কিংবা রোগা হয়ে গেলে অথবা গর্ভাবস্থায় ত্বকে স্ট্রেচ মার্কস লক্ষ্য করা যায়। এটি কমাতে অ্যালোভেরার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। মূলতঃ দৈনন্দিন অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করার ফলে ত্বকের স্ট্রেচ মার্কস হালকা হয়ে আসতে থাকে। এছাড়াও অ্যালোভেরা অ্যাস্ট্রিনজেন্ট এর মত কাজ করে ত্বকের লোমকূপ কে টাইট করতে সহায়তা করে।

কিভাবে ব্যবহার করবেন ?

  • অ্যালোভেরা জেল এর সমপরিমাণ নারকেল তেল নিয়ে একটি তরল মিশ্রন তৈরি করুন।
  • এবার এই মিশ্রণটি রাতে শুতে যাওয়ার আগে স্ট্রেচ মার্কস যুক্ত অংশে লাগিয়ে শুতে চলে যান।
  • দেখবেন এক সপ্তাহের মধ্যেই এই এই দাগ হালকা হতে শুরু করেছে।

চুলের জন্য এলোভেরার উপকারিতা – Hair Benefits of Aloe Vera in Bengali

ত্বকের পাশাপাশি চুলের যত্নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে অ্যালোভেরা। এটি চুলের বৃদ্ধি ঘটাতে এবং চুলের কোষ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। অ্যালোভেরা মাথার ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটিয়ে চুলকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করে তোলে। এছাড়াও চুলে এবং মাথার ত্বকে কোনো রকমের চুলকানি কিংবা ঘায়ের সৃষ্টি হলে সেটি কমাতে সহায়তা করে। অ্যালোভেরার পুষ্টি চুল এবং মাথার ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটিয়ে চুলকে সুন্দর এবং স্বাস্থ্যজ্জ্বল করে তোলে। প্রাকৃতিক উপাদান অ্যালোভেরার গুনাগুন বাজারজাতও যেকোনো ধরনের চুলের প্রসাধনী কে ছাড়িয়ে যেতে পারে। অ্যালোভেরা মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালনকে ত্বরান্বিত করে। যার ফলে চুলের শিকড় গুলির স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে। যার ফলে চুলের গোড়ায় শক্তি প্রদান করা হয়ে থাকে এবং চুল গোড়া থেকে শক্তিশালী হয়। দৈনিক আমাদের চুল পরিচর্যার তালিকায় যদি অ্যালোভেরা রাখা যায় সেক্ষেত্রে চুল ভেতর এবং বাইরে থেকে পুষ্টিকর হয়ে উঠবে। এক নজরে দেখে নিন চুলের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কিভাবে অ্যালোভেরা ব্যবহার করা হয়ে থাকে ? (১৪)

১) চুল বৃদ্ধিতে অ্যালোভেরার ব্যবহার : Hair Growth

বড় চুল কে না চায়। প্রাচীন যুগ থেকেই চুল পরিচর্যায় অ্যালোভেরার ব্যবহার হয়ে আসছে। আলোভেরার মধ্যে থাকা উপাদানগুলি চুলকে ভেতর থেকে শক্তিশালী করে তোলে যার ফলে চুল ছেঁড়া কম হতে থাকে এবং চুলের বৃদ্ধি দারুণভাবে ঘটতে থাকে। এটি চুলকে ঘন এবং সুন্দর করে তুলতে সাহায্য করে। এছাড়াও চুলের পিএইচ এর ভারসাম্য রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে অ্যালোভেরা। অ্যালোভেরার উপাদানগুলি চুলকে ভেতর থেকে শক্তিশালী করে তুলে চুল পড়া কমানোর পাশাপাশি নতুন চুল গজাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

কিভাবে ব্যবহার করবেন ?

  • অ্যালোভেরার দুটো পাতা থেকে সম্পূর্ণ জেলের অংশ বের করে নিন।
  • এবার এই জেল মাথার স্ক্যাল্পে নিয়ে এবং চুলে লাগিয়ে দুই হাত দিয়ে ভালো করে সারা মাথায় মাসাজ করে নিন।
  • এটি সপ্তাহে অন্তত ৩ দিন করুন।
  • দেখবেন চুল পড়ার সমস্যা সম্পূর্ণ কমে গেছে এবং নতুন চুল গজাতে শুরু করেছে।

২) খুশকি দূরীকরণে অ্যালোভেরার ভূমিকা : Dandruff

Dandruff
Image: Shutterstock

চুল বড় করার ইচ্ছা যেমন সকলেরই থাকে তার পাশাপাশি একটি পরিষ্কার চুলের স্বপ্নও সকলেই দেখেন। মাথার ত্বক শুষ্ক হয়ে উঠলে সেখান থেকে মরা কোষ গুলি উঠতে দেখা যায়। এগুলিকে খুশকি বলা হয়। মূলতঃ মাথার ত্বক অত্যধিক শুষ্কতার কারণে খুশকির সমস্যা দেখা যায়। এছাড়াও যেকোন ধরনের জীবাণুর সংক্রমণ থেকেও এটি হতে পারে। তাই খুশকি দূর করে স্ক্যাল্পকে সমস্যা মুক্ত রাখতে অ্যালোভেরার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। অ্যালোভেরার মধ্যে থাকা বিভিন্ন উপাদান গুলি মাথার ত্বকে আর্দ্রতা প্রদান করে এবং খুশকির সমস্যা সমাধান করে। এছাড়াও এটি চুলের পিএইচ ভারসাম্য রক্ষা করে। তাই খুশকি দূরীকরণে অ্যালোভেরার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

কিভাবে ব্যবহার করবেন?

  • অ্যালোভেরার দুটো পাতা থেকে সম্পূর্ণ জেল বার করে নিন।
  • এবার জেলটির মধ্যে অর্ধেক লেবুর রস দিয়ে ভালো করে মিক্সিতে ফেটিয়ে একটি রস তৈরি করে নিন।
  • এবার এটি অল্প ভেজা চুলে লাগিয়ে পনেরো থেকে কুড়ি মিনিট অপেক্ষা করুন।
  • চুলটা উষ্ণ তোয়ালে দিয়ে জড়িয়ে রাখুন।
  • এরপর ঈষদুষ্ণ জল দিয়ে শ্যাম্পু করে নিন।
  • সপ্তাহে একদিন এই প্যাকটি ব্যবহার করুন। এতে চুলের যেকোনো সমস্যা দূর হওয়ার পাশাপাশি খুশকির সমস্যাও দূর হবে।

৩) চুল কন্ডিশনিংয়ে অ্যালোভেরার ব্যবহার : Conditioning Hair

একটি উজ্জ্বল ঝকঝকে চুল কে না চায়। তবে আমাদের পরিবেশ দূষণের কারণে আমাদের চুল প্রায় নষ্ট হতে বসেছে। তাই চুলের যথাযথ দৈনন্দিন পরিচর্যা প্রয়োজন। আর এই পরিচর্যা যদি যেকোনো প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে সম্ভব হয় সেটি তাহলে চুলকে সর্বাঙ্গীনভাবে সুন্দর করে তুলতে পারে। এমনই চুল পরিচর্যার অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো অ্যালোভেরা। এটি যে কোনো ধরনের বাজারজাত ও নামিদামি পণ্য সামগ্রীকেও পিছনে ফেলে দেয়। চুলকে নরম এবং সুন্দর রাখতে অ্যালোভেরার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। অ্যালোভেরার মধ্যে থাকা উপাদানগুলি চুলকে ভেতর থেকে শক্তিশালী করে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করে তোলে।

কিভাবে ব্যবহার করবেন?

  • চুলের দৈর্ঘ্য অনুযায়ী অ্যালোভেরার পাতা থেকে জেল বের করে নিন।
  • এবার এর সাথে নারকেল তেল মিশিয়ে পরিষ্কার স্ক্যাল্পে এই মিশ্রণটি লাগিয়ে সারারাত রেখে দিন।
  • পরদিন সকালে উঠে যে কোন ধরণের মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন।
  • সপ্তাহে তিন দিন এটি ব্যবহার করুন।
  • দেখবেন চুল তার হারানো উজ্জ্বলতা ফিরে পেয়েছে এবং সুন্দর হয়ে উঠেছে। (১৫)

স্বাস্থ্যের জন্য এলোভেরার উপকারিতা – Health Benefits of Aloe Vera in Bengali

অ্যালোভেরা হলো এক ধরনের পুষ্টি কারী উপাদান যেটি আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর মধ্যে থাকা বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদানগুলি শরীরের বিভিন্ন রোগ-জীবাণুর সাথে লড়াই করে শরীরে অনাক্রমতা প্রদান করে। এছাড়াও ডায়াবেটিস, ক্যানসারের মতো দুরারোগ্য রোগের বিরুদ্ধে চিকিৎসা করে। অ্যালোভেরা আপনার স্বাস্থ্য রক্ষায় কিরূপ ভূমিকা পালন করে এক নজরে জেনে নিন।

১) ওজন কমাতে অ্যালোভেরার ভূমিকা : Weight Loss

গবেষণায় দেখা গিয়েছে শরীরের বাড়তি ফ্যাট কমিয়ে শরীরের ওজন কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে অ্যালোভেরা। এছাড়াও ওজন বাড়ানো কমানোর পাশাপাশি শরীরে অনাক্রম্যতা দান করে শরীরকে শক্তি প্রদান করতে সমর্থ হয় অ্যালোভেরা। দৈনন্দিন ডায়েট চার্টে অ্যালোভেরা রাখলে সেটি শরীরের ওজন কমিয়ে স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায় এবং শরীরের স্থূলতা কমাতে সহায়তা করে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে অত্যধিক স্থূলতা যে সমস্ত ব্যক্তিদের শরীরে রয়েছে সেগুলো দৈনিক অ্যালোভেরার রস গ্রহণের ফলে কমতে সহায়তা করেছে। এছাড়াও অ্যালোভেরার মধ্যে থাকা উপাদান গুলি শরীরে যেকোনো ধরনের পুষ্টিকর চাহিদাগুলো মিটায় এবং শরীরকে ভেতর থেকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। দীর্ঘদিন ধরে স্থূলকায় কয়েকটি ইঁদুরের ওপর অ্যালোভেরা প্রয়োগ করে লক্ষ্য করা গিয়েছে, তাদের শরীরের চর্বি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল অ্যালোভেরা জেল এবং অ্যালোভেরা শরীরে ফ্যাট কমানোর পাশাপাশি শরীরকে আরো শক্তিশালী করে তুলতে সহায়তা করে। কেবলমাত্র ওজন কমাতে নয়, কোলেস্টেরল এবং স্থূলতার মতন অন্যান্য ব্যাধিগুলি কমাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে অ্যালোভেরা। (১৬)

কিভাবে ব্যবহার করবেন?

  • দৈনিক সকাল বেলা খালি পেটে দু’চামচ অ্যালোভেরা রস খাবেন।
  • এটি জলে মিশিয়ে কিংবা আমলকির রস দিয়ে মিশিয়ে খেতে পারেন।
  • তাহলে একমাসেই ওজন কম হতে শুরু হবে।
  • এছাড়াও এটি গ্রহণের পাশাপাশি দৈনিক সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।
সতর্কতাঃ

গর্ভবতী মহিলাদের খাদ্যতালিকায় অ্যালোভেরা রস গ্রহণ করা একেবারেই অনুচিত এবং দীর্ঘদিন ধরে যারা হূদযন্ত্রের সমস্যায় ভুগছেন তারা অ্যালোভেরার রস খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করে নেবেন। কেননা সকলের শরীরে এটি সমানভাবে প্রয়োজনীয় নাও হতে পারে। এছাড়া যারা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন তারাও অ্যালোভেরার রস খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নেবেন।

২) কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণে অ্যালোভেরার ভূমিকা : Constipation

Constipation
Image: Shutterstock

কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যার সমাধানে অ্যালোভেরার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। মূলতঃ হজম জনিত যেকোনো ধরনের অসুস্থতার ক্ষেত্রে অ্যালোভেরা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এছাড়াও এটি ডায়েরিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা সমাধান করতেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। মূলতঃ জ্বালাময়ী আন্ত্রিক সিনড্রোমের কারণেই ডায়েরিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা গুলি দেখা যায়। যার ফলে পেটে ব্যথা, পেট ফাঁপা এবং পেট ফুলে যাওয়ার মতন সমস্যাগুলো লক্ষ্য করা যায়। অ্যালোভেরার পাতায় এমন কিছু উপাদান থাকে যেগুলি এ ধরনের জ্বালা ভাব, পেট ফুলে যাওয়া কমাতে সহায়তা করে। অ্যালোভেরার জুসে থাকা ল্যাটেক্স যুক্ত উপাদানগুলি কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে সহায়তা করে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, অ্যালোভেরার জুস কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

কিভাবে ব্যবহার করবেন ?

  • অ্যালোভেরার জুস দিয়ে যেকোনো ধরনের স্মুদি তৈরি করে দৈনিক তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।
  • কিংবা অ্যালোভেরা গাছের জুস নিয়ে তার মধ্যে এক দুই চামচ জল কিংবা করলার রস মিশিয়ে গ্রহণ করতে পারেন।
  • এছাড়াও অ্যালোভেরা জুসের সাথে শশা, লেবু ও পুদিনাপাতা মিশিয়ে বিভিন্ন ধরনের পানীয় তৈরি করে খাদ্য তালিকার অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।
  • এটি দৈনিক গ্রহণের ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে চিরতরে মুক্তি পাবেন।

৩) ডায়াবেটিস কমাতে অ্যালোভেরার ভূমিকা : Diabetes/Blood Sugar

দৈনিক অ্যালোভেরার ব্যবহার করলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, দৈনিক অ্যালোভেরা গ্রহণের ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ৪৬৬ মিলিগ্রাম পর্যন্ত কমে। অ্যালোভেরার গ্লাইকেটেড উপাদান হিমোগ্লোবিনের ওপর প্রভাব ফেলে। গত দুই থেকে তিন মাস পরীক্ষা করে দেখা গেছে এটি রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমাতে এটি সহায়তা করে। এছাড়াও প্রি ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রেও একই রকম প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। অ্যালোভেরার দৈনিক ব্যবহারের ফলে মাত্র চার সপ্তাহের মধ্যে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ অনেকটা কমিয়ে দেয় এবং তাদের অস্বাভাবিক লিপিড প্রোফাইল করে। অ্যালোভেরা রক্তে ইনসুলিনের পরিমাণ বাড়াতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। অ্যালোভেরার মধ্যে থাকা গ্লুকোমানান, হাইড্রোফিলিক ফাইবার এবং ফাইটোস্টেরল জাতীয় উপাদান গুলি ইনসুলিন বাড়াতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। অ্যালোভেরা জেল এর পাশাপাশি অ্যালোভেরার পাতাগুলো এক্ষেত্রে কার্যকরী। (১৭)

কিভাবে ব্যবহার করবেন?

  • দৈনিক এক চামচ করে অ্যালোভেরার রস দিনে দুবার গ্রহণ করতে পারেন।
  • এটি ইনসুলিন প্রবাহকে ত্বরান্বিত করে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সহায়তা করে।
  • ডায়াবেটিস চিকিৎসার ক্ষেত্রে অ্যালোভেরার ব্যবহার অত্যন্ত সহজ।

৪) অনাক্রমতা প্রদানে অ্যালোভেরার ব্যবহার : Immunity Booster

অ্যালোভেরা জেল ম্যাক্রোফেজগুলির কার্যকারিতাকে উন্নত করে, যা ইমিউন সিস্টেম এর গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। গবেষণায় লক্ষ্য করা গিয়েছে, অ্যালোভেরার রস দৈনিক গ্রহণের ফলে ব্যক্তিদের শরীরে অনাক্রমতা বেড়ে ওঠে। যেকোনো ধরনের অ্যালোভেরা পাউডার দিয়ে প্রস্তুত খাদ্য রোগীদের মধ্যে প্রদান করে লক্ষ্য করা গিয়েছে, তাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তাদের শরীরের অনাক্রম্যতা জোরদার করতে আলোভেরা সহায়তা করে। এবং অ্যালোভেরার জুস ও অ্যালোভেরা দিয়ে তৈরি যে কোন ধরনের খাদ্য উপাদান এ ক্ষেত্রে প্রদান করা যেতে পারে। (১৮)

কিভাবে ব্যবহার করবেন?

  • দৈনিক খাদ্যতালিকায় অ্যালোভেরা সমৃদ্ধ যে কোন ধরনের খাদ্য উপাদান রাখুন।
  • সকাল বেলা খালি পেটে অ্যালোভেরা রস খেতে পারেন।
  • কিংবা খাদ্যতালিকায় অ্যালোভেরা এবং অন্যান্য উপাদান দিয়ে তৈরি জুস রাখতে পারেন।
  • এ ক্ষেত্রে অ্যালোভেরা, শসা, লেবু, পুদিনা পাতা দিয়ে স্মুদি তৈরি করে খেতে পারেন। এটি স্বাস্থ্যকর এবং খেতেও সুস্বাদু হবে।

৫) হজমে সহায়তা করে অ্যালোভেরা : Digestion

হজমের সমস্যা লেগেই রয়েছে। গ্যাস, অম্বল, অ্যাসিডিটি, পেট ফাঁপা এগুলি আমাদের নিত্যদিনের অঙ্গ। তবে অ্যালোভেরার ব্যবহারের ফলে এই সমস্ত সমস্যার সমাধান হতে পারে। অ্যালোভেরার ব্যবহার পেটের মধ্যে চলা এসমস্ত অস্বস্তি, জ্বালাময়ী সিনড্রোম এবং পেটে ব্যথার মতন সমস্যাগুলির দ্রুত সমাধান করে। এছাড়াও এটি কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে হওয়া ব্যথার সমাধান করতে পারে। অ্যালোভেরা মূলত এক ধরনের পদার্থ হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা সমাধান করে খাদ্যের সঠিকভাবে হজমে সহায়তা করে এবং অন্ত্রের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করে। তবে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে তাহলেই অ্যালোভেরা সমৃদ্ধ ওষুধ গ্রহণ করা উচিত। পেটে অতিরিক্ত অ্যাসিড এর প্রভাব লক্ষ্য করা গেলে সেক্ষেত্রে ডাক্তাররা যে সমস্ত ওষুধ প্রদান করে থাকে সেখানে অনেকাংশে আলোভেরার গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। এছাড়াও পেটে গ্যাসের সমস্যার জন্য গবেষণায় লক্ষ্য করা গিয়েছে অ্যালোভেরার ব্যবহার তাৎপর্যপূর্ণ। অ্যালোভেরার মধ্যে থাকা উপাদান গুলি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার সমাধান করে। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, যারা দৈনিক অ্যালোভেরার রস গ্রহণ করেন তারা আগের তুলনায় অনেক ভালো রয়েছেন এবং হজমের সমস্যার সমাধান করতে পেরেছেন। (১৯)

কিভাবে ব্যবহার করবেন?

  • দৈনিক সকাল বেলা খালি পেটে দু চামচ করে অ্যালোভেরা রস গ্রহণ করুন।
  • তারপর উষ্ণ গরম জল খেয়ে নিন।
  • এটি হজমকে ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকেও শরীরকে দূরে রাখবে।

৬) কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে অ্যালোভেরার ভূমিকা : Cholesterol

গবেষণায় লক্ষ্য করা গিয়েছে, অ্যালোভেরার রস শরীরকে প্রভাবিত করতে পারে যার ফলে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে আসে। এছাড়াও ট্রাইগ্লিসারাইডের পরিমান কমতে সাহায্য করে। গবেষণার লক্ষ্য করা গিয়েছে, এইচ ডি এল কোলেস্টেরল এর স্তর গুলি খানিকটা, এছাড়াও এটি লিপিডের মাত্রা কমিয়ে আনতে সহায়তা করে। অ্যালোভেরার মধ্যে থাকা ফাইটোস্টেরল, কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে। এছাড়াও অ্যালোভেরার মধ্যে অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো গ্লুকোমানেন। যা এক প্রকার দ্রবণীয় ফাইবার। এটি শরীরের কোলেস্টেরল কমিয়ে আনতে সহায়তা করে। মূলত শরীরে কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইডের সমস্যার সমাধান করতে সহায়তা করে অ্যালোভেরা।

কিভাবে ব্যবহার করবেন?

  • অ্যালোভেরার থেকে পাওয়া গুঁড়ো কিংবা ক্যাপসুল আকারে অথবা সরাসরি অ্যালোভেরার রস খাদ্য তালিকার অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।
  • এটি শরীরে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে।
  • এবং শরীরকে সুস্থ সবল রাখতে সাহায্য করবে।

৭) মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণে অ্যালোভেরার ভূমিকা : Brain Health

Brain Health
Image: Shutterstock

আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের যদি উন্নতি করতে চান তাহলে অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো অ্যালোভেরা। দৈনন্দিন আলোভেরার ব্যবহার আমাদের মেজাজকে উন্নতি করতে এবং মানসিক শান্তি প্রদান করতে মস্তিষ্কের যেকোন ক্রিয়াকে সম্পন্ন করতে সহায়তা করে। এছাড়াও মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি দৃঢ় করার পাশাপাশি যেকোনো ধরনের মস্তিষ্ক জনিত অসুস্থতা থেকে শরীরকে সুস্থ এবং সামর্থ্য রাখতে সহায়তা করে। এছাড়াও এটি ব্রেনবুস্টার সাপ্লিমেন্ট হিসেবে কাজ করে। মূলত স্মৃতিশক্তি যাতে ফ্যাকাশে না হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে স্মৃতিশক্তি হ্রাসের মতন বিভিন্ন সমস্যা গুলি লক্ষ্য করা যায়। তবে এগুলো নিরাময় এর পাশাপাশি যেকোনো ধরনের মানসিক চাপ থেকে শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

কিভাবে ব্যবহার করবেন?

  • দৈনিক সকাল বেলা খালি পেটে এক চামচ করে অ্যালোভেরার রস খেতে পারেন।
  • এছাড়াও অ্যালোভেরার পাউডার কিংবা অ্যালোভেরার যেকোনো সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে পারেন।
  • দৈনিক এটি গ্রহণ করার ফলে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত থাকবে।
  • তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী। কেন না কোন কিছুই হঠাৎ করে ব্যবহার করা ঠিক নয়। তাই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ নিয়ে তারপর অ্যালোভেরার রস খাওয়া শুরু করবেন।

৮) হৃদরোগের সমস্যায় অ্যালোভেরার ব্যবহার : Heart Diseases

বর্তমানে টেনশন, স্ট্রেস, চিন্তার জীবনে হৃদরোগের সমস্যা প্রায় ঘরে ঘরে। আর তার জন্য ভুড়ি ভুড়ি ওষুধ খাওয়া তো চলতেই আছে। তবে এবার হৃদরোগের সমস্যা ব্যবহার করা যাবে অ্যালোভেরাকে। অ্যালোভেরার মধ্যে থাকা উপাদান গুলি শরীরে অনাক্রমতাকে বাড়িয়ে তোলে। এর পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপের সমস্যাকেও কমাতে সাহায্য করে। মূলত উচ্চ রক্তচাপের কারণেই হৃদরোগের সমস্যা দেখা যায়। দৈনিক খাদ্যতালিকায় তাদের এই অ্যালোভেরা জুসের ব্যবহার শরীর স্বাস্থ্য সম্পন্ন হয়ে ওঠে। গবেষণায় লক্ষ্য করা গিয়েছে, যারা অ্যালোভেরার জুস পান করেন তাদের হার্ট অ্যাটাকের কিংবা স্ট্রোকের সম্ভাবনা কম থাকে। কেননা এটি প্রচুর পুষ্টিকর উপাদান সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরকে ডিটক্সিফাই করে। এছাড়াও রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এছাড়াও উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য খুব উপকারী একটি উপাদান অ্যালোভেরা। এছাড়াও হৃদরোগের সম্ভাবনা কমায় এটি। কেননা এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আছে, যা রক্তসঞ্চালন কে বাড়িয়ে শিরা এবং ধমনীকে শক্তিশালী করে তোলে। অ্যালোভেরার অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদান গুলি রক্তে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়িয়ে তোলে, যার ফলে কার্ডিওভাস্কুলার সিস্টেমে থেরাপিউটিক সুবিধা হয়। বহু রোগীদের ওপর গবেষণা করে দেখা গিয়েছে, অ্যালোভেরার জুস গ্রহণের ফলে হাইপার টেনশন, হৃদরোগের সম্ভাবনা কমে এসেছে এবং উচ্চ রক্তচাপ ও কন্ঠনালী প্রদাহের মতন সমস্যাগুলির সমাধান হয়েছে।

কিভাবে ব্যবহার করবেন?

  • দৈনিক দশ থেকে কুড়ি এমএল অ্যালোভেরার গ্রহণের ফলে মোট পনেরো শতাংশ কোলেস্টেরল এবং পঁচিশ থেকে ত্রিশ শতাংশ ট্রাইগ্লিসারাইড শরীর থেকে হ্রাস করতে পারে।
  • ডাক্তারের নির্দেশে অ্যালোভেরার জেল গ্রহণ করতে পারেন।
  • ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যালোভেরার রস গ্রহণ করুন এবং ওষুধ গ্রহণের পাশাপাশি এটি ব্যবহার করুন।
  • অ্যালোভেরার রস খাবার আগে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলে নিন।

৯) প্রদাহ বা পেট জ্বালা কমাতে অ্যালোভেরার ভূমিকা : Inflammation

যেকোনো ধরনের ব্যথা কিংবা প্রদাহের সাথে লড়াই করতে পারে অ্যালোভেরা। অ্যালোভেরায় উপস্থিত অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যগুলো জ্বালা-যন্ত্রণা সাথে লড়াই করে শরীরের শান্তি প্রদান করে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, অ্যালোভেরা জেল যেকোনো হাইড্রোকর্টিসন ক্রিম এর তুলনায় জ্বালাভাব কিংবা যেকোন প্রদাহে বেশি আরাম প্রদান করে। মূলত অ্যান্টি-ইনফ্লেমিটরি বৈশিষ্ট্যগুলো শান্তি প্রদান করতে সহায়তা করে। এছাড়াও অ্যালোভেরা উদ্ভিদের মধ্যে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্যগুলো অস্টিওআর্থ্রাইটিস এর চিকিৎসাতেও সাহায্য করতে পারে। এছাড়াও অ্যালোভেরা গ্যাস্ট্রাইটিস এর যেকোনো ব্যথা কমাতে সহায়তা করে। এছাড়াও ক্রনিক ক্যান্সারের চিকিৎসা করতে পারে। মূলত ব্যথা কিংবা পা ফুলে যাওয়া, জয়েন্ট গুলিতে ব্যথায় অ্যালোভেরা জেল প্রয়োগ করলে প্রচুর স্বস্তি পাওয়া যায়। এই জেল ব্যবহার করার পাশাপাশি শরীরে আলাদা একটা ঠান্ডা ভাব প্রেরণ করে থাকে, যার জন্য যেকোনো ধরনের প্রদাহের ক্ষেত্রে অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করলে সেখানে স্বস্তি পাওয়া যায়। (২০)

কিভাবে ব্যবহার করবেন?

  • ব্যথা কিংবা জ্বালা ভাব যুক্ত অংশের জায়গাটা ভালো করে পরিষ্কার করে নিন।
  • এখানে সারারাত পুরু করে অ্যালোভেরা জেল লাগিয়ে রাখুন।
  • পরদিন সকালে উঠে জায়গাটা ধুয়ে নিন।
  • এরকম দু-একদিন করতে থাকুন ত্বকের ওপর কোথাও জ্বালাভাব কিংবা লালচে ভাব থাকলে তা কমে যাবে।
  • এছাড়া যদি পেটের ভেতরে জ্বালা ভাব থাকে, সে ক্ষেত্রে অ্যালোভেরা গাছের রস করে খেতে পারেন।
  • যদি অসুবিধা না হয় অ্যালোভেরা জেল টা খেয়ে নিতে পারেন। এটি পেটের ভেতর খাওয়া জ্বালা ভাব কমিয়ে স্বস্তি প্রদান করবে।
  • এছাড়াও গ্যাস্ট্রিক আলসারের ব্যাথায় যারা ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে অ্যালোভেরা একটি অপরিহার্য উপাদান। এটি ব্যবহার করার ফলে এক ধরনের স্বস্তি লাভ করবে আপনার শরীর।

১০) বাতের ব্যথা কমান অ্যালোভেরা দিয়ে : Arthritis

বয়স চল্লিশের কোঠা পেরিয়েছে কি বাতের ব্যথায় নাকাল মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। নানা ওষুধ, আয়ুর্বেদ চর্চা সব কিছু করেও লাভ হয়নি। তাইতো এবার তাহলে আপনার হাতের কাছে থাকা অ্যালোভেরা গাছ কে রকম একটু ভরসা করে দেখবেন নাকি? আপনার পরিত্রাণের উপায় হতে পারে এটি। কেননা অ্যালোভেরার মধ্যে থাকা অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান গুলি যেকোনো ধরনের ব্যথা বেদনা কমাতে সহায়তা করে। এছাড়া শরীরের জয়েন্টে ফোলা ভাব কমাতে সাহায্য করে। যেকোনো ধরনের পেইনকিলার কিংবা পেইন রিলিফ মলমের তুলনায় তাৎক্ষণিক কাজ করে অ্যালোভেরা জেল। তাই এবার অ্যালোভেরা জেল এর উপর ভরসা করে দেখতেই পারেন। বলা যায় না এটি আপনার বাতের ব্যথা থেকে চিরতরে কমিয়ে দিল।

কিভাবে ব্যবহার করবেন?

  • বাতের ব্যথা যুক্ত অংশে ভালো করে অ্যালোভেরা জেল লাগিয়ে রাখুন।
  • একটি ঠান্ডা প্রদান হবে এবং এগুলো ছাড়াও দৈনিক খাদ্য তালিকা রাখলে এটি শরীরের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করবে।
  • যার ফলে শরীরের কোনায় কোনায় অক্সিজেন পৌঁছে যাবে এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গা গুলোতে সঠিকভাবে ব্যথা নিরাময় করে দেবে।
  • তাই আজ থেকে খাদ্যতালিকায় রাখুন।
  • সকালে উঠে খালি পেটে দশ থেকে কুড়ি এমএল অ্যালোভেরা জেল গ্রহণ করুন।

১১) মৌখিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে অ্যালোভেরা জেল : Oral Health

Oral Health
Image: Shutterstock

মুখের ভিতর যেকোনো ধরনের সংক্রামক প্রদাহজনিত রোগ নিরাময়ে অ্যালোভেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে। পেরিয়োডন্টিস্ট সম্পর্কিত চিকিৎসা গুলোয় দেখা যায় অ্যালোভেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এসব রোগের উপসর্গ গুলির সমাধান করতে সাহায্য করেছে।অ্যালোভেরা। মুখের ভেতরে হওয়া যে কোন রোগের নিরাময় এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অ্যালোভেরা মারি থেকে রক্তপাত কিংবা দাঁতের গোড়ায় ফোলা ভাব এই সমস্ত সমস্যা গুলোর ক্ষেত্রে শক্তিশালী অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে। অ্যালোভেরা মুখের ভেতর কোণায় কোণায় পৌঁছে মুখ পরিষ্কার এর ব্যবস্থা করে। এছাড়াও দাঁতের গোড়ায় কিংবা জিভে হওয়া যে কোন ধরনের সমস্যার সমাধান করে। দৈনিক দাঁত ব্রাশের পরে অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিসেপটিক উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। (২১) সকালবেলা ব্রাশ করার আগেও অ্যালোভেরা জেল দিয়ে মুখ ধুতে পারেন। এটি দাঁতের গহ্বরে যে সমস্ত ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টি হয় সেগুলো নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। মুখের ভেতরের যে কোন সমস্যার সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে অ্যালোভেরা জেল। সংবেদনশীল দাঁত বা মাড়ির লোকেদের ক্ষেত্রে অ্যালোভেরা জেল টুথপেস্ট এর সেরা বিকল্প হতে পারে। এটি ব্যবহারের ফলে দাঁতে জোরে ঘষাঘষির প্রয়োজন হবে না, যেটা পেস্টের ক্ষেত্রে করতে হয়। এইজেল টিতে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি এবং অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়ার বৈশিষ্ট্য গুলো যেকোনো ধরনের ব্যাকটেরিয়া কে হ্রাস করতে পারে। এছাড়া মুখের ভেতর কোথাও কোনও ঘা হলে তার চিকিৎসাতেও অ্যালোভেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়াও মুখের গহ্বরের ভেতরে যে কোন ধরনের সংক্রমণ প্রতিরোধে এটি সাহায্য করে থাকে। তাই মৌখিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে কে আজ থেকেই টুথপেষ্টের বদলে ব্যবহার করুন অ্যালোভেরা।

কিভাবে ব্যবহার করবেন?

  • সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে বাসিমুখে পরিমাণমতো অ্যালোভেরা জেল নিয়ে মুখে কুলকুচি করে ফেলে দেবেন।
  • তারপর প্রয়োজন হলে টুথপেস্ট ব্যবহার করতে পারেন।
  • এটি প্রত্যেকদিন করতে হবে। তাহলেই মুখের গহবরের যেকোন সংক্রমণ থেকে দূরে থাকতে পারবেন।

১২) সর্দি কাশি এবং ঠান্ডা লাগা কমাতে অ্যালোভেরার ব্যবহার : Cough and Cold

আবহাওয়ার হঠাৎ পরিবর্তনের ফলে শরীর যে ধরনের ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত সেগুলি কমাতে অ্যালোভেরা মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করে। আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণেই সর্দি কাশি, ঠান্ডা লাগার মত সমস্যাগুলো দেখা যায়। মূলত এগুলো একজনের থেকে আরেকজনের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। যাদের শরীরের অনাক্রম্যতা ক্ষমতা কম থাকে তাদের মধ্যেই এটি ছড়িয়ে পড়তে লক্ষ্য করা যায়। এ ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিবায়োটিক উপাদান হলো অ্যালোভেরা। এটি মুখের ভেতর এবং গলা থেকে ভাইরাস জাতীয় জীবানু নাশ করে। যার ফলে শরীরের ব্যাকটেরিয়া বাসা বাঁধতে পারে না, অনাক্রম্যতা বৃদ্ধি পায় এবং শরীর যেকোনো ধরনের ছোটখাটো জ্বর সর্দি থেকে দূরে থাকে। অ্যালোভেরার মধ্যে উপস্থিত অ্যান্টি ইনফ্লেমেটারি এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান সমূহ শরীরকে যেকোনো ধরনের ব্যাকটেরিয়া থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে।

কিভাবে ব্যবহার করবেন?

  • একটা বড় অ্যালোভেরার পাতা তিন চার টুকরো করবেন।
  • প্রত্যেকটা ভাগের থেকে সবুজ অংশটা কেটে নিন।
  • এরপর ভেতরের থেকে সাদা অংশটা বের করে নিন।
  • এবারে সাদা অংশটা মিক্সিতে ভাল করে ফেটিয়ে নিয়ে একটা আপেলের জুসের সাথে এটা মিশিয়ে খেয়ে নিন।
  • এটি লেবু দিয়েও খেতে পারেন। লেবু খাওয়ার ফলে শরীরে অনাক্রম্যতা বৃদ্ধি পাবে এবং সর্দি কাশি এবং ঠান্ডা লাগার সমস্যা গুলোর সমাধান হবে।
  • ব্যাকটেরিয়া আক্রমণের কারণে এই সমস্ত সমস্যাগুলো দেখা দেয়। অ্যালোভেরার জুস খাওয়ার ফলে শরীর সুস্থ এবং ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ থেকে দূরে থাকবে।

এলোভেরার জুস খাবার সঠিক উপায় – How to Drink Aloe Vera Juice in Bengali

অ্যালোভেরা আমাদের শরীরের ত্বক, চুল ও স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এবার তাই অ্যালোভেরাকে খাবারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না করলেই নয়। তবে কেবলমাত্র খেলেই হবে তা নয়, অ্যালোভেরা কিভাবে আপনি ব্যবহার করতে পারেন জেনে নিন :

১) খাবারের সাথে অ্যালোভেরার পাতা কেটে নিয়ে আপনি খেতে পারেন।

২) অ্যালোভেরার সবুজ অংশের ভেতর থেকে জেল বার করে নিয়ে খেতে পারেন।

৩) কিংবা অ্যালোভেরার জেলটা দিয়ে যেকোনো ধরনের স্মুদি তৈরি করে খেতে পারেন।

৪) এছাড়া অ্যালোভেরা জেল দিয়ে শরবত তৈরি করে খেতে পারেন।

৫) টমেটো, লেবুর রস, রসুন, সামুদ্রিক লবণ এবং অ্যালোভেরা ভালো করে মিক্সিতে ফেটিয়ে নিয়ে জুস তৈরি করে চিপস এর সাথে খেতে পারেন।

৬) এছাড়া আপনার খাদ্যতালিকায় থাকা স্যালাডের সাথে অ্যালোভেরা পাতা খেতে পারেন কিংবা অ্যালোভেরা জেল আপনার স্যালাডে যোগ করতে পারেন।

৭) এছাড়াও অ্যালোভেরার রস শুধুমাত্র খেতে পারেন।

৮) প্রয়োজন হলে অ্যালোভেরা পাতার সাথে যেকোনো ধরনের ফলের রস এককাপ মিশিয়ে খেতে পারেন।

৯) কখনো আপেলের রস, কখনো লেবুর রস কিংবা পেপের রসের সাথে অ্যালোভেরা মিশিয়ে খেতে পারেন।

১০) মূলত আপনার পছন্দসই যেকোনো ফলের রস এর সাথে এটি খেতে পারেন।

১১) অ্যালোভেরার সবুজ অংশ থেকে জেল বের করে নিয়ে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন। এবার যখন কোন ফলের রস করবেন তার মধ্যে মিশিয়ে দিতে পারেন।

১২) প্রতিদিন অ্যালোভেরার রস আপনি খেতে পারেন। অ্যালোভেরা জেল, অ্যালোভেরার রস, অ্যালোভেরার সাপ্লিমেন্ট কিংবা অ্যালোভেরা পাউডার, অ্যালোভেরা তেল যেটা আপনার পছন্দ সেটা আপনি খাদ্য তালিকার অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।

আজ থেকেই আপনার ডায়েট চার্টে অ্যালোভেরা অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।

এলোভেরা কে অনেক দিন পর্যন্ত সুরক্ষিত রাখার উপায় – How to Store Aloe Vera in Bengali

আপনি যদি অনেকদিন পর্যন্ত অ্যালোভেরা জেল সুরক্ষিত রাখতে চান তবে জেনে নিন কি করতে হবে?

১) আপনি যদি অনেকদিন পর্যন্ত অ্যালোভেরা জেল সুরক্ষিত রাখতে চান তবে সে ক্ষেত্রে আপনি এটি অবশ্যই ফ্রিজে রেখে দিন।

২) সম্ভব হলে অ্যালোভেরার থেকে জেল বের করে নিয়ে বরফের ট্রেতে রেখে ডিপ ফ্রিজে রেখে দিন। সেখানে অ্যালোভেরা জেল বরফের কিউব হয়ে থাকবে এবং আপনার যখন প্রয়োজন হবে শুষ্ক ত্বকে কিংবা রোদে পোড়া ত্বকের ওপর এটি ব্যবহার করতে পারবেন।

৩) এছাড়াও তৎক্ষণাৎ কোন অসুবিধা হলে ফার্স্ট এইড হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন।

৪) যদি ত্বকের ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে চান তাহলে অ্যালোভেরা জেল ও ভিটামিন ই তেলের সাথে মিশিয়ে রেখে দিতে পারেন।

৫) সাদা অংশটা এবং ভিটামিন ই তেল ভালো করে মিক্সিতে মিশিয়ে নিয়ে সেটা একটি কোটো করে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন। যখন এটি প্রয়োজন হবে আপনি ব্যবহার করতে পারেন।

৬) এছাড়াও অ্যালোভেরা জেল এর সাথে মধু মিশিয়ে অনেকদিন পর্যন্ত রাখা যেতে পারে।

৭) অ্যালোভেরার পাতা সমেত জেল এবং তার সাথে পরিমাণমতো মধু মিশিয়ে মিক্সার এর একটা পেস্ট তৈরি করে নিন এবং একটি কৌটোতে ফ্রিজে রেখে দিন। এটি আপনি ফেসিয়াল মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন।

৮) অ্যালোভেরার সাথে ভিটামিন সি মিক্স করে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন। পরিমাণমতো অ্যালোভেরা জেল এবং লেবুর রস দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে একটা টাইট কৌটোর মধ্যে রেখে ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে পারেন। এটি যেকোন ধরণের কালচে দাগ কিংবা ত্বকের সমস্যার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

৯) অ্যালোভেরা জেল পরিষ্কার প্লাস্টিকের পাউচে রেখে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন। সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে অনেকদিন ধরে।

১০) দীর্ঘদিন ধরে প্রায় ছয় থেকে সাত মাস পর্যন্ত এই মিশ্রণ সংরক্ষিত করে ভবিষ্যতে ব্যবহার করতে পারবেন।

১১) অ্যালোভেরা জেল আপনি সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন কিংবা শুধু অ্যালোভেরা জেলের তৈরী মাস্ক ছয় থেকে সাত মাস পর্যন্ত এই পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা যেতে পারে।

এলোভেরার অপকারিতা – Side Effects of Aloe Vera in Bengali

Side Effects of Aloe Vera in Bengali
Image: Shutterstock

এতক্ষণ আমরা আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষায়, চুলের যত্নে কিংবা ত্বকের যত্নে কিভাবে অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করব সেটি সম্পর্কে জেনেছি। অ্যালোভেরার মধ্যে থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্যগুলো আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। যে কারণে আমরা মৌখিকভাবে গ্রহণ করার পাশাপাশি বাহ্যিকভাবে অ্যালোভেরাকে গ্রহণ করতে পারি। সে ক্ষেত্রে ত্বকের ক্রিম, শেভিং ক্রিম, সাবান, টুথপেস্ট, শ্যাম্পু ইত্যাদি অ্যালোভেরার তৈরি পণ্য সামগ্রী ব্যবহার না করে সরাসরি অ্যালোভেরা ব্যবহার করার কথা ভেবেছি। তবে একটা কথা আমরা জানি কোন জিনিস অত্যধিক ব্যবহার ফলে খারাপ প্রভাব লক্ষ্য করা যেতে পারে। তেমনি অ্যালোভেরার অত্যধিক ব্যবহারের ফলে কিছু খারাপ প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। আসুন জেনে নিন কি কি সমস্যার সম্মুখীন হতে হতে পারে আপনাকে যদি অত্যধিক অ্যালোভেরা ব্যবহার করেন?

১) ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে :

গবেষণায় লক্ষ্য করা গিয়েছে, ডি ক্লোরাইজড অ্যালোভেরা পাতার নির্যাস গ্রহণ ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। এই গবেষণাগুলো ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে। তবে চিকিৎসকরা দাবি করেন অ্যালোভেরা সরাসরি ব্যবহার করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। কেননা প্রত্যেক মানুষের শরীর এবং তার চাহিদা আলাদা হয়। সেই মত ডাক্তার তার ডোজ নির্ধারণ করে দেবেন। যেকারনে প্রত্যেকের শরীরে নির্দিষ্ট পরিমান অ্যালোভেরা প্রয়োজন আছে। সে ক্ষেত্রে অত্যধিক অ্যালোভেরা ব্যবহার আগে অবশ্যই সর্তকতা অবলম্বন করুন এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চলুন।(১৬)

২) গর্ভবতী ও প্রসূতি নারীদের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর হতে পারে :

গর্ভাবস্থায় কিংবা বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় মায়েদের মনে হতে পারে তাদের ওজন হঠাৎ বেড়ে যাচ্ছে কিংবা এমন একটি সমস্যা যেটা অ্যালোভেরা খাওয়ার ফলে কমতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রে এর ব্যবহার করা যাবে কিনা? উত্তর না। কেননা গর্ভাবস্থায় কোনও নারী যদি অ্যালোভেরা গ্রহণ করেন সে ক্ষেত্রে এটি তার ভ্রূণের ওপর বিষাক্ত প্রভাব ফেলতে পারে। যা তার গর্ভস্থ সন্তানের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এছাড়াও স্তন্যদানের সময় অ্যালোভেরার ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। কেননা আপনার শরীর থেকেই তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি গ্রহণ করছে আপনার ছোট্ট প্রাণটি। তাই তার কথা ভেবে এই সময় অ্যালোভেরা ব্যবহার থেকে দূরে থাকুন এবং নিরাপদে থাকুন। পৃথিবীতে আসা প্রানটিকে নিজের সর্বস্ব দিয়ে বেড়ে তুলুন। (১৭)

৩) অ্যালার্জি হতে পারে :

আমরা অনেকেই জানি, অ্যালোভেরা আমাদের সরাসরি ত্বকে ব্যবহারের ফলে অ্যালার্জি কিংবা রাশের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তেমনি অ্যালোভেরা খাওয়ার পরেও কিছু কিছু ব্যক্তির পেটে অস্থিরতা, বমি বমি ভাব কিংবা ফুসকুড়ির সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই সমস্ত লক্ষণগুলোর মধ্যে কোনো লক্ষণ যদি আপনি অ্যালোভেরা খাওয়ার পর দেখেন তাহলে অবশ্যই তৎক্ষণাৎ অ্যালোভেরা খাওয়া বন্ধ করুন। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া হঠাৎ করে নতুন কিছু খাবার শুরু করবেন না।

৪) হাইপোক্যালেমিয়ার কারণ হতে পারে :

দৈনিক অ্যালোভেরা খাওয়ার ফলে শরীরে হঠাৎ করে পটাশিয়ামের মাত্রা কমে যেতে পারে। যার ফলে খিঁচুনি ভাব এবং ইলেকট্রোলাইটের অস্বাভাবিকতা দেখা দিতে পারে। কেমোথেরাপির ক্ষেত্রে এই সমস্ত প্রভাব গুলো প্রকটভাবে বোঝা যেতে পারে। এর পিছনে আরো কি কি কারণ থাকতে পারে তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে নির্দিষ্ট মাত্রার তুলনায় অধিক অ্যালোভেরা যদি গ্রহণ করেন এই সমস্ত সমস্যার সম্মুখীন হতেই হবে। ক্যান্সার রোগীদের ক্ষেত্রে মূলত সাবধান। অ্যালোভেরা গ্রহণের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চলুন।

৫) লিভারের প্রদাহ হতে পারে :

অ্যালোভেরা সরাসরি গ্রহণের ফলে লিভারের প্রদাহজনিত ঘটনা ঘটতে পারে। যদি আপনার কোনও লিভারের সমস্যা থাকে সে ক্ষেত্রে অ্যালোভেরার রস খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন। ডাক্তার যদি মনে করেন সে ক্ষেত্রে অ্যালোভেরার সাপ্লিমেন্ট কিংবা ওষুধ আপনার শরীরের প্রয়োজন মতো দেবেন। কিন্তু কখনোই নিজে থেকে বাড়তি কিছু গ্রহণ করতে যাবেন না।

৬) সম্ভাব্য ড্রাগ ইন্টারঅ্যাকশন :

অ্যালোভেরা গ্রহণ করার আগে অবশ্যই আপনার শরীরে কি কি ওষুধ চলছে সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন। কেননা এমন কিছু ওষুধ আছে যেগুলি গ্রহণ করার সময় আপনি অ্যালোভেরা গ্রহণ করতে পারবেন না। সে ক্ষেত্রে উল্টে উপকারের বদলে শরীরে অপকার হবে। তাই আলোভেরা যদি খেতে চান সে ক্ষেত্রে ডাক্তারি পরামর্শ গ্রহণ করুন। কেননা আপনার ডাক্তার ওষুধের তালিকা দেখেই তারপর আপনাকে অ্যালোভেরা খাওয়ার পরামর্শ দেবেন।

তবে অ্যালোভেরা খাওয়ার ক্ষেত্রে এই বাধ্যবাধকতা রয়েছে কিন্তু আপনি আপনার ত্বক এবং চুলের ক্ষেত্রে অ্যালোভেরা যেমন খুশি ব্যবহার করতে পারেন। তবে লক্ষ্য করা যায় কোষ্ঠকাঠিন্যের ক্ষেত্রে অনেকে অ্যালোভেরার রস গ্রহণের পরামর্শ দেয় কিংবা যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত সেই সমস্ত রোগীরা দিনে পাঁচ থেকে পনেরো এমএল ব্যবহার করতে পারেন। তবে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী। নিজে থেকে কোন কিছু না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চলুন। কেননা, রোগ আপনার, কষ্ট আপনি পাচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে কোন কিছু শুনে করার থেকে হিতে বিপরীত হওয়ার থেকে সুস্থ থাকার চেষ্টা করুন এবং ডাক্তারের পরামর্শেই এগিয়ে চলুন।(২২)

অ্যালোভেরা একটি সৌন্দর্য বৃদ্ধিকারী উপাদান হিসেবে প্রাচীন যুগ থেকেই ব্যবহার হয়ে আসছে। বর্তমান সময়ে আমরা বহু ক্ষেত্রে অ্যালোভেরার ব্যবহার করে থাকি। এ ছাড়াও বেশ কয়েকটি কোম্পানির অ্যালোভেরা জেল আমাদের মধ্যে খুবই প্রচলিত। তবে আমরা অধিকাংশই ত্বক পরিচর্যার ক্ষেত্রে অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করে থাকি। এর পাশাপাশি চুল এবং স্বাস্থ্য রক্ষায় অ্যালোভেরা জেলের ব্যবহার কতটা কার্যকরী তা হয়তো আমাদের ধারণা ছিল না। তবে বর্তমানে অ্যালোভেরার কার্যকারিতা সম্পর্কে আমরা সবাই অবগত। তাই এবার অ্যালোভেরা সম্পর্কে সম্পূর্ণটাই ধারণা তৈরি করে নিয়েছেন। অ্যালোভেরা কম ক্যালরি যুক্ত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি উপাদান। এটির গুনাগুন সম্পর্কে আমরা আজকের নিবন্ধে জেনেছি এবং দৈনন্দিন আমাদের খাদ্য এবং স্বাস্থ্যের তালিকায় অ্যালোভেরা কিভাবে ব্যবহার করব তা জেনেছি। এর পাশাপাশি অ্যালোভেরা আমাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে কি কি সাহায্য করে তাও জেনেছি। এবার তাহলে নির্দ্বিধায় কোনও রকম চিন্তা ছাড়াই অ্যালোভেরার ব্যবহার শুরু করুন। তবে অবশ্যই অ্যালোভেরা খাওয়ার আগে ডাক্তারি পরামর্শ গ্রহণ করে নেবেন। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন সকলকে ভাল রাখুন পরবর্তী আপডেটের জন্য আমাদের পেজ এ চোখ রাখুন।

Was this article helpful?
thumbsupthumbsdown

Community Experiences

Join the conversation and become a part of our vibrant community! Share your stories, experiences, and insights to connect with like-minded individuals.

Latest Articles